মঙ্গলবার, ০৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ২৪ জুন ২০২৫ , ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে করণীয়

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ১২:০০ এএম

হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে করণীয়
প্রেসার সিস্টোলিকে ৯০ মিলিমিটার পারদ চাপ এবং ডায়াস্টোলিকে ৬০ মিলিমিটার পারদ চাপ হলো নিচের দিকে রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা। এর কম হলেই তখন লো প্রেসার জনিত বিভিন্ন জটিলতা শুরু হয়। বসা বা শুয়ে থাকা থেকে দাঁড়ানোর সময় প্রেসার কমে যাওয়া লো প্রেসারের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। বয়স্ক লোকদের সাধারণত খাওয়ার পরে হঠাৎ করে প্রেসার কমে যেতে দেখা যায়।

এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাত ও গুরুতর সংক্রমণের জন্য লো প্রেসার অনেক সময় জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে। চলুন জেনে নেই হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে কি করতে হবে।

হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে করণীয়

প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ
সোডিয়াম দ্রুত প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে। তবে বেশি সোডিয়াম গ্রহণ হৃদরোগেরও কারণ হতে পারে। তাই শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে আগে থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে যে, হঠাৎ সোডিয়াম খাওয়া ঠিক হবে কি না।

লবণাক্ত খাবার প্রেসার বাড়াতে পারে। টিনজাত স্যুপ, পনির, আচারযুক্ত আইটেম এবং জলপাই ইত্যাদি লবণাক্ত খাবার হিসেবে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। অপ্রক্রিয়াজাত খাবারে টেবিল লবণ যোগ করা যায়। এতে কতটা লবণ খাওয়া হচ্ছে তার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার প্রেসার বৃদ্ধি করে। ফোলেট-সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো- মটরশুটি, মসুর ডাল, শাক, ডিম এবং সাইট্রাস ফল যেমন লেবু, কমলা।

ক্যাফেইনযুক্ত চা বা কফি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে এবং হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে অস্থায়ীভাবে প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে।

প্রচুর পানি পান করা

ডিহাইড্রেশন লো প্রেসারের একটা বড় কারণ হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে হালকা ডিহাইড্রেশনও লো প্রেসারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বমি, গুরুতর ডায়রিয়া, জ্বর, কঠোর ব্যায়াম এবং অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে দ্রুত ডিহাইড্রেশন ঘটতে পারে। মূত্রবর্ধক জাতীয় ওষুধও ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রচুর পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। শরীরের প্রয়োজনীয় পানি বেরিয়ে যেতে শুরু করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে পুরো দৈহিক অবস্থা দুর্বল হয়ে থাকে, যা যে কোন অঘটনের দিকে ধাবিত করতে পারে।

সাবধানে শরীরের অবস্থানের পরিবর্তন করা

শরীরের অবস্থান পরিবর্তনের ফলে লো প্রেসার অর্থোস্ট্যাটিক নামে পরিচিত। যেকোনো বয়সেই বহুল সংঘটিত এই লো প্রেসার এড়ানোর জন্য শরীরের অবস্থান পরিবর্তনের সময় সতর্ক থাকতে হয়। বসা বা শুয়ে থাকার পর নিজেকে দাঁড়ানোর জন্য যথেষ্ট সময় নিয়ে দাড়াতে হবে। দাঁড়ানোর সময় ধরে রাখার জন্য কাছাকাছি শক্ত কিছু রাখা দরকার। তাহলে মাথা ঘোরার অবস্থা হলে তাতে অবলম্বন করে ভারসাম্য বজায় রাখা যাবে।

দীর্ঘ সময় ধরে দাড়ানোর সময় মাঝে মাঝে পা নাড়াতে হবে। দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষা পায়চারি উত্তম। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠায় হয়ে এক জায়গায় বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে না থাকাটাই ভালো। যেকোনো দৈহিক অবস্থার পরিবর্তনে যথেষ্ট সময় নেওয়া দরকার। হঠাৎ করে ভঙ্গি পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্য নষ্ট করে।

বসা অবস্থায় পা ক্রস করলে প্রেসার বেড়ে যায়। লো প্রেসারের উপসর্গযুক্ত লোকেদের জন্য পা আড়াআড়ি রাখার এই ন্যূনতম প্রচেষ্টাটি প্রেসার বাড়ানোতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।

মোজা পড়া

রাবার জাতীয় হাত বা পা বন্ধনী কাপড় অথবা মোজা হাতে ও পায়ে রক্ত জমতে বাধা দেয়। অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের ক্ষেত্রে এই উপায়টি বেশ কার্যকর।
বিছানায় বিশ্রামরত অবস্থায় পা থেকে রক্ত পাম্প করতে সাহায্য করার জন্য কম্প্রেশন ব্রেসের প্রয়োজন হতে পারে। বয়স্ক লোকদের মধ্যে এই অবস্থার পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট লো প্রেসার বেশি দেখা যায়। তাই তাদের হাতে ও পায়ে মোজা পড়ানো যেতে পারে। অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন মধ্যবয়সী মানুষের ১১ শতাংশ এবং বয়স্ক লোকদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ঘটে।

লো প্রেসারের চরম অবস্থায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। তবে এই আকস্মিক দুরবস্থা থেকে রেহাই পেতে আগে থেকেই সতর্ক থাকা উত্তম। দৈনন্দিক জীবন ধারণে সুষম খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের যুগপৎ সংযোজনের মাধ্যমে লো প্রেসারের মত সকল স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট সময় পর পর ব্লাড প্রেসার ও থাইরয়েড পরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসরণ সঠিক খাদ্যাভাস বজায় রাখা সুস্থ জীবনের পরিপূরক।
পরবর্তী খবর
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক ২০২৫

পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিশালী পাকিস্তান, সামগ্রিক শক্তিতে এগিয়ে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম

Image

এআই দিয়ে তৈরি এইচএসসি পরীক্ষার মুহূর্ত।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক শক্তির তুলনা করা হলে সেখানে জনবল, অস্ত্রশস্ত্র, বাজেট, পারমাণবিক ক্ষমতা ও কৌশলগত নীতি–আদর্শের এক জটিল হিসাব–নিকাশ প্রতিফলিত হয়। ১৯৪৭ সালে বিভক্তির পর থেকে দুই দেশ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আছে। এ সময়ে একাধিক যুদ্ধে জড়ানোর ইতিহাস রয়েছে তাদের। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উভয় দেশ উল্লেখ করার মতো সামরিক শক্তিও বজায় রেখে চলেছে।

গত মঙ্গলবার ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ওই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এ হামলায় পাকিস্তানের মদদ থাকার অভিযোগ তুলে ভারত দেশটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে পাকিস্তানও।

এমন প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তান সামরিকভাবেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে—এ আশঙ্কা অনেকের। প্রাসঙ্গিকভাবে উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসছে। এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’।

‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ অনুসারে করা এ প্রতিবেদন ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়ার ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:

সামগ্রিক সামরিক র‍্যাঙ্কিং ও সক্ষমতা সূচক

‘জিএফপি ২০২৫’–এ ৬০টির বেশি বিষয়ের (জনশক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থা ইত্যাদি) ভিত্তিতে ১৪৫টি দেশকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, সামগ্রিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ, সক্ষমতা সূচকে স্কোর ০.১১৮৪ (কম স্কোর মানে বেশি শক্তিশালী সেনাবাহিনী)। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম, স্কোর ০.২৫১৩।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

সামরিক–বেসামরিক জনশক্তি
প্রচলিত যুদ্ধে জনবল গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। ভারত ও পাকিস্তানের জন্যও তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশাল জনসংখ্যা ও স্থলবাহিনীর ওপর উভয় দেশেরই নির্ভরতা রয়েছে।

ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি (বিশ্বে দ্বিতীয়)। সক্রিয় জনশক্তি ৬৬ কোটি ২০ লাখ। সক্রিয় সেনা ১৪ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। রিজার্ভ সেনা ১১ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ২৫ লাখ ৩০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। মোট সামরিক (সক্রিয় ও রিজার্ভ সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনী) জনবল ৫১ লাখ।

অন্যদিকে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২৫ কোটি ২০ লাখ (বিশ্বে পঞ্চম)। সক্রিয় জনবল ১০ কোটি ৮০ লাখ। সক্রিয় সেনা ৬ লাখ ৫৪ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। রিজার্ভ সেনা ৬ লাখ ৫০ হাজার। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য জিএফপিতে স্পষ্টভাবে পরিমাপ করা হয়নি, তবে উল্লেখযোগ্য (রেঞ্জার্স ও ফ্রন্টিয়ার কোরসহ)। মোট সামরিক শক্তি ১৭ লাখ (সক্রিয়, রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনী)।

ভারতের জনবল পাকিস্তানের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি এবং রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনীও বড়। পাকিস্তান যদিও কম জনবল নিয়ে কাজ করে, তবে তাদের মধ্যে ‘মুজাহিদ’–এর মতো আইএসআই–নিয়ন্ত্রিত অনিয়মিত বাহিনীগুলো রয়েছে।

প্রতিরক্ষা বাজেট

ভারতের বাজেট (২০২৫-২৬) ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়)। এটি জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এ ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক সামরিক সহায়তা ১০ কোটি ডলার (মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে)।

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। এ বিপুল প্রতিরক্ষা ব্যয় ভারতের সামরিক খাতে প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত এবং জনশক্তির আধুনিকীকরণে আরও বেশি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে। পাকিস্তান বাজেট–সংকটে ভুগলেও চীনের সহায়তা এটিকে সামাল দিচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়।

স্থলবাহিনী

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্থলবাহিনী। দেশ দুটির মধ্যে ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। দুদেশের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৯৯ সালে প্রচলিত ঘরানার যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে।

ভারতের ট্যাংক ৪ হাজার ৬১৪টি। সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮টি। কামান ৯ হাজার ৭১৯টি। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে প্যারা এসএফ, ঘাতক ফোর্স, এমএআরসিওএস।

পাকিস্তানের ট্যাংক ৩ হাজার ৭৪২টি। সাঁজোয়া যান ৫০ হাজার (আনুমানিক)। কামান ৪ হাজার ৪৭২টি (৩৭৫ স্বয়ংক্রিয় হাউইটজারসহ)। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি), এসএসজি নৌ ও স্পেশাল সার্ভিস উইং। এগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট হলেও সমীহ করার মতো।

ট্যাংক, সশস্ত্র যান ও কামানে সংখ্যাগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত। পাকিস্তানেরও ট্যাংকবহর প্রতিযোগিতামূলক। এ বহর চীনের ভিটি–৪–এর মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা। রয়েছে এম১১৩ ও আল–ফাহাদের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা স্থল সমরযান।

বিমানবাহিনী

আধুনিক যুদ্ধে, বিশেষত দ্রুত সাড়া দেওয়া ও নির্ভুল আক্রমণের জন্য বিমান বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের মোট বিমান ২ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫১৩ থেকে ৬০৬টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এসইউ–৩০এমকেআই, রাফায়েল, তেজস। রয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস–৪০০। হেলিকপ্টার আছে অ্যাপাচি ও চিনুক। আরও আছে চারটি ‘এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল (এইডব্লিউঅ্যান্ডসি)’ ব্যবস্থা।

পাকিস্তানের মোট বিমান ১ হাজার ৩৯৯ থেকে ১ হাজার ৪৩৪টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৩২৮ থেকে ৩৮৭টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এফ–১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, জেএফ–১৭ থান্ডার, মিরেজ থ্রি/ফাইভ। আছে ভারতের চেয়ে বেশি যুদ্ধে ব্যবহার উপযোগী হেলিকপ্টার (এএইচ–১এফ কোবরাসহ)। এইডব্লিউঅ্যান্ডসি আছে সাতটি, যা ভারতের চেয়ে বেশি।

ভারতের বিমানবহর আকারে বড় ও বৈচিত্র্যময়; তবে স্কোয়াড্রনের ঘাটতি আছে। পাকিস্তানের বিমানবহর তুলনামূলক ছোট হলেও তার আধুনিকায়ন হচ্ছে। পাকিস্তানের এইডব্লিউঅ্যান্ডসি–সুবিধা বাড়তি নজরদারিতে ব্যবহার করা হয়।

নৌবাহিনী

ভারত মহাসাগরে ভারতের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় ও আরব সাগরে পাকিস্তানের অভিযানের জন্য নৌসক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের জাহাজ রয়েছে ২৯৪টি। বিমানবাহী রণতরি আছে ২টি। সাবমেরিন ১৮টি (পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিহান্টসহ)। ডেস্ট্রয়ার ১৩টি। ফ্রিগেট ১৪টি। প্যাট্রোল নৌযান ১০৬টি। যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী বিমান ৭৫টি (নৌবাহিনীর)। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ৬৭ হাজার ৭০০।

পাকিস্তানের জাহাজ ১২১টি। সাবমেরিন ৮টি। ফ্রিগেট ৯টি। প্যাট্রোল নৌযান ১৭টি। এ বাহিনীর যুদ্ধবিমান ৮টি। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ২৩ হাজার ৮০০।

ভারতীয় নৌবাহিনী তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী ও গভীর সমুদ্রে অভিযান চালানোর উপযোগী। পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত ছোট নৌবাহিনী মূলত উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক অভিযানে মনোযোগ দেয়। বিমানবাহী রণতরি না থাকা ও সীমিতসংখ্যক যুদ্ধবিমানের কারণে গভীর সমুদ্র দেশটির নৌবাহিনীর অভিযান চালানোয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

পারমাণবিক সক্ষমতা

ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি–থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরেজ ২ হাজার ও রাফায়েল এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষায় আইএনএস আরিহান্ট। পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার (নো ফার্স্ট ইউজ/এনএফইউ) নীতির পক্ষে ভারত। তবে এ ধরনের হামলার শিকার হলে ব্যাপক আকারে প্রতিশোধমূলক হামলার পক্ষে দেশটি।

অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন–টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ–১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল–স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

কৌশলগত জোট ও জটিল মূল্যায়ন

ভারতের কৌশলগত জোটে রয়েছে ইসরায়েল, রাশিয়া ও ফ্রান্স। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক। আছে সীমিত পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও।

জনবল, সামরিক ব্যয় ও প্রচলিত অন্যান্য প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের এগিয়ে থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও পাকিস্তানের সামরিক শক্তিকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পরমাণু ও কৌশলগত অস্ত্রের সমৃদ্ধ ভান্ডার, অপ্রতিসম যুদ্ধকৌশল ও চীনের জোরালো সমর্থন দেশটিকে এক সুবিধাজনক প্রতিরক্ষা অবস্থানে রেখেছে।

প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের আধুনিকায়নে অন্যতম বাধা তার আমলাতন্ত্র ও দ্বৈত মনোযোগ (চীন–পাকিস্তান)। পুরোনো বিমানবহরও দেশটির জন্য একটি বাধা। ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযানে বেশি মনোযোগও দেশটির আরেক দুর্বলতা।

অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংগ্রাম, তুলনামূলক ছোট জনশক্তি, পুরোনো সামরিক সরঞ্জাম ও আঞ্চলিক উত্তেজনা তার সামরিক সক্ষমতায় বাধা হয়ে আছে।

আরএস