ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্গাপূজার সর্বজনীনতা ও অর্থনৈতিক ব্যাপকতা

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় : ০৯-১০-২০২৪ ১২:৫৯:২৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১২-১০-২০২৪ ০৭:৩২:১৬ অপরাহ্ন
দুর্গাপূজার সর্বজনীনতা ও অর্থনৈতিক ব্যাপকতা
৯ অক্টোবর ২০২৪ থেকে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা। ২ অক্টোবর ২০২৪ ছিল মহালয়া। বাঙালির জীবনে দুর্গাপূজার তিনটা দিক আছে—প্রথমত, হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মীয় দিক; দ্বিতীয়ত, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে বাঙালির জন্য উৎসবের দিক এবং তৃতীয়ত, সবার জন্য এটি সামাজিক সৌহার্দ্যের দিক।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পাঁচ দিনে পূজামণ্ডপে এবং ঘরে-বাইরে পূজার ধর্মীয় আচার-বিধি পালন করবেন নিষ্ঠাভরে। সব বাঙালি মেতে উঠবেন পূজার আনন্দ উৎসবে—রঙিন পোশাক-আশাকে মণ্ডপে-মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা দেখায়, গানে-বাজনায়, খাওয়া-দাওয়ায়।

সেই সঙ্গে পথে-ঘাটে, ঘরে বাইরে বিভিন্ন ধর্মের মানুষেরা যখন শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন, একে অন্যের কুশল জানতে চাইবেন এবং বিজয়া দশমীর দিনে একে অন্যকে যখন আলিঙ্গন করবেন, সেই সামাজিক সৌহার্দ্যের কোনো তুলনা নেই। বাঙালির জীবনে দুর্গাপূজার একটি অনন্য ভূমিকা রয়েছে।

দুর্গাপূজার বহুধা মাত্রিকতা রয়েছে—ধর্মের, উৎসবের এবং সেই সঙ্গে সামাজিকতার। কিন্তু দুর্গোৎসবকে ঘিরে যে নানাবিধ কর্মকাণ্ড, তার একটি অর্থনৈতিক ব্যাপকতাও রয়েছে। সরকারি হিসাবে, ২০২৪ সালে সারাদেশে, ঢাকা শহরের ২৫০টি পূজামণ্ডপসহ, মোট ৩২ হাজার ৬৬৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। এর জন্য সরকারি অনুদান পাওয়া যাবে ৩-৪ কোটির টাকার মতো।২০২৩ সালে শারদীয় দুর্গোৎসবের অর্থনৈতিক লেনদেন হয়েছিল আনুমানিক প্রায় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার। ২০২৪ সালে তা আরও বিস্তৃত হবে এবং এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। সুতরাং অর্থের অঙ্কের পরিমাণ থেকেই দুর্গাপূজার অর্থনীতির বিশাল ব্যাপ্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যেসব কর্মকাণ্ডকে ঘিরে পূজার অর্থনীতি গড়ে ওঠে তার মধ্যে রয়েছে—প্রতিমা গড়া, মণ্ডপ সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা, পূজা প্রক্রিয়ায় ফুল-ফলের নৈবেদ্য, ঢাকিদের বায়না, পুরোহিতদের কর্মনিয়োজন ও সেবাপ্রদানের দক্ষিণা, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নতুন পোশাক-আশাক এবং পারস্পরিক আপ্যায়ন, প্রতিমা বিসর্জনের খরচাপাতি ইত্যাদি। সেই সঙ্গে যোগ করা দরকার আরও দু'টি ব্যয়—পাড়ায় পাড়ায় পূজার জন্য প্রণামী সংগ্রহ এবং পূজা শেষে ভ্রমণ ব্যয়। পুরোটা মিলেই দুর্গাপূজার অর্থনীতি। দুর্গাপূজায় অর্থনীতির চাকা সচল হয় পূজার বেশ আগে থেকেই—যখন থেকে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয় তখনই। প্রতিমা গড়ার ব্যয় তিন রকমের—উপকরণের খরচ, প্রতিমা শিল্পীর মজুরি এবং প্রতিমার রঙ ও অলঙ্করণের ব্যয়।

উপকরণের মধ্যে বিচালি বা খড় এবং মাটির খরচ আছে, খরচ আছে রঙ, কাপড় এবং অলঙ্কারেরও। প্রতিমা যারা গড়েন, সেই শিল্পীদের সারা বছরের একটি থোক বড় আয়ের মৌসুমই হচ্ছে দুর্গাপূজার সময়টা। প্রতিমা শিল্পীদের মজুরি শুধু প্রধান প্রতিমা শিল্পীর মধ্যেই সীমিত থাকে না, জোগানদারদেরও সেটা দিতে হয়।

পূজা-মণ্ডপ ব্যয় ও পুরো পূজার সময়কালে মণ্ডপের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার খরচও কিন্তু কম নয়। মণ্ডপভিত্তিক এবং মণ্ডপের পেছনের চালচিত্র সাজাতে হয়—সেটি একটি বিশেষ শিল্পকর্ম। সেই সঙ্গে মণ্ডপে বিদ্যুৎ ও প্রক্ষেপণ যন্ত্রেরও খরচ আছে। পূজামণ্ডপের সাজসজ্জার ক্ষেত্রে একটি মণ্ডপের সঙ্গে আরেকটির পারস্পরিক প্রতিযোগিতার কারণে মণ্ডপ-ব্যয় অনেক সময়ই বেড়ে যায়।

পূজার সময় ফুলের বাজারে ফুলের এবং ফলের বাজারে নানান ফলের দাম বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন নতুন করে নৈবেদ্য সাজাতে হয়। বিভিন্ন পদের ফলের পাশাপাশি মিষ্টি, দই, সন্দেশ, জিলাপি, আমৃত্তি দিয়ে নৈবেদ্য সাজাতে হয়। এর আলাদা খরচ আছে। প্রতিমা বিসর্জনের দিনেও নানান রকমের ব্যয় বহন করতে হয়। প্রতিমাকে পূজামণ্ডপ থেকে নদী পর্যন্ত বহন করার পরিবহন ব্যয়, জলে প্রতিমা বিসর্জনের জন্যে নৌকার ব্যয়ও বড় কম নয়। সেই সঙ্গে মণ্ডপ ভাঙা, পূজার স্থান পূজা-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ারও খরচ আছে।

পূজার পরেই অনেকেই সপরিবারে ছুটিতে বের হবেন। সেটাও ব্যয়সাপেক্ষ। তবে অনেক সময়েই এর জন্য পারিবারিক সঞ্চয় করা হয়। সেই সঙ্গে পূজার সময়ে কাজের দপ্তর থেকে বাড়তি বেতনেও সাশ্রয় হয় অনেকখানি।

বোঝাই যাচ্ছে যে দুর্গাপূজার অর্থনীতি বেশ বিস্তৃত এবং সে অর্থনীতির নানান মাত্রিকতাও ব্যয়সাপেক্ষ। তবে দুর্গাপূজার একটি মাত্রিকতার ক্ষেত্রে কোনো খরচ নেই। সেটি হচ্ছে সামাজিক সৌহার্দ্যের ক্ষেত্র। সেখানে পুরোটাই লাভ, সেখানে কোনো ক্ষতি নেই। এ বছরের দুর্গাপূজায় সৌহার্দ্যের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যাক না।

ড. সেলিম জাহান ।। ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ