ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে ট্রাম্প মনোনীত তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় : ১৫-১১-২০২৪ ০৮:৪৩:৫৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৫-১১-২০২৪ ০৮:৪৩:৫৩ অপরাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে ট্রাম্প মনোনীত তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর নিজের আসন্ন প্রশাসন সাজানোয় মন দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই প্রশাসনে স্থান পেতে যাচ্ছেন ট্রাম্পঘনিষ্ঠ নানা মুখ। তাঁদেরই একজন তুলসী গ্যাবার্ড। তাঁকে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে বসাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের এই পছন্দ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এমনকি তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির অনেকেই এ নিয়ে চটেছেন।

তুলসীর বয়স ৪৩ বছর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হিন্দু কংগ্রেস সদস্য। ডোমোক্রেটিক পার্টির হয়ে ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস সদস্য ছিলেন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন। তবে পরে তিনি সরে দাঁড়ান। দুই বছর পর ২০২২ সালে ডোমোক্রেটিক পার্টি ছাড়েন তিনি। দীর্ঘ সময় তুলসী মার্কিন সামরিক বাহিনীতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ইরাক ও কুয়েত যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে চলতি বছরের আগস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানান তুলসী গ্যাবার্ড। গত অক্টোবরে নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের এক নির্বাচনী সমাবেশে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তুলসী।

জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কাজ কী

জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইনটেলিজেন্স কমিউনিটি’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স প্রোগ্রামের দেখভাল করেন। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ইনটেলিজেন্স কমিউনিটির প্রধান তথা গোয়েন্দা পরিচালক হলে তুলসী গ্যাবার্ডের অধীনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ), কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা, নৌবাহিনীর গোয়েন্দা, বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা, মহাকাশবাহিনীর গোয়েন্দা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ ১৮টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও দপ্তর থাকবে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদটি সৃষ্টি করা হয়। ২০০৫ সালে প্রথম এ পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। দেশটির বর্তমান গোয়েন্দা পরিচালকের নাম এভ্রিল হেইনস। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নিয়োগ পেলে তুলসী গ্যাবার্ড হবে দেশটির প্রথম নারী গোয়েন্দা পরিচালক।

গোয়েন্দা সংস্থায় তুলসীর অভিজ্ঞতা কী আছে

গোয়েন্দাসংক্রান্ত কোনো পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সরাসরি তুলসী গ্যাবার্ডের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আর এত দিন যাঁরা জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের মতো তুলসী কোনো জ্যেষ্ঠ সরকারি পদে আগে ছিলেন না। তিনি শুধু দুই বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইনটেলিজেন্স কমিউনিটির বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচক হয়ে উঠেছেন তুলসী। অন্য কোনো দেশে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। মোদ্দাকথা, বিশ্বের অন্য কোথাও চলা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যেন হস্তক্ষেপ না করে, সে বিষয়ে সোচ্চার থেকেছেন তুলসী। রাশিয়া-ইউক্রেন

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এর তিন দিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট দিয়ে তুলসী বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেনের ‘ভূরাজনীতি থেকে দূরে থাকা উচিত’। আর ন্যাটোর মতো কোনো সামরিক জোটের সদস্য নয়, বরং ইউক্রেনকে একটি ‘নিরপেক্ষ’ দেশ হিসেবে মেনে নেওয়া উচিত।

সে বছরের মার্চ মাসে এক্সে আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন তুলসী। তাতে বলেছিলেন, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে নির্মিত ২৫টির বেশি জৈব–গবেষণাগার রয়েছে। এর আগে রাশিয়াও একই অভিযোগ তুলেছিল। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন। এ অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তুলসীর ওই পোস্টের পর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এ নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন রিপাবলিকান সদস্যরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য অ্যাডাম কিনজিঞ্জারও। তিনি বলেছিলেন, তুলসীর ওই বক্তব্য ‘বিশ্বাসঘাতকতামূলক’। তিনি রাশিয়ার ‘অপপ্রচারের’ সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। একই কথা বলেছিলেন সিনেটর মিট রমনিও।

সিরিয়া

২০১১ সালে সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হয়। এর নেপথ্যে ছিল আন্দোলনকারীদের ওপর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের দমন–পীড়ন। পরে ওই আন্দোলন বিদ্রোহে রূপ নেয়। তা থেকেই শুরু হয় সশস্ত্র যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ছিলেন তুলসী গ্যাবার্ড।

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের বিরোধীদের সাহায্য করেছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সরকার। এ জন্য ২০১৫ সালে ওবামার সমালোচনা করেছিলেন তুলসী। আর সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে একবার বলেছিলেন, ২০১৭ সালে গোপনে সিরিয়া সফরে গিয়ে বাশার আল-আসাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। তুলসী আরও বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ নয়, বরং সিরিয়ার মানুষকেই তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে দিন।’ ইরান

২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রথম মেয়াদের শেষ বছরে এসে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন এক গোয়েন্দা ব্রিফিংয়ে তুলসী গ্যাবার্ড বলেছিলেন যে ট্রাম্প প্রশাসনের এই কর্মকাণ্ডের ‘কোনো যৌক্তিকতা নেই’।

সিএনএনের এক সাক্ষাৎকারে তুলসীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তায় ইরান কোনো হুমকি সৃষ্টি করছে কি না? জবাবে তিনি বলেছিলেন, প্রশ্নটা এমন হওয়া উচিত ছিল যে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে? তখন জবাবটা হবে, ‘না’।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ