বিজয় দিবসকে ঘিরে ঝিনাইদহে ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি
দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় :
১৫-১২-২০২৪ ০৯:৩৩:১৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৫-১২-২০২৪ ০৯:৩৩:১৮ অপরাহ্ন
বিজয় দিবসকে ঘিরে ঝিনাইদহে ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি দেশে ফুলের দ্বিতীয় রাজধানীখ্যাত ঝিনাইদহ। এ বছর পুরো সময়টায় লোকসানের মুখ দেখতে হয়েছে জেলার ফুল চাষিদের। লাভ তো দূরের কথা, বেশিরভাগ ফুল চাষির খরচের টাকাই ওঠেনি। তারপরও নতুন আলোর স্বপ্ন দেখছেন ঝিনাইদহের ফুল চাষিরা। দফায় দফায় বৃষ্টি, বৈরী আবহাওয়া আর সেইসঙ্গে পুরো বছরই ছিল আন্দোলনের বছর। যা লোকসান বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। প্রতিবছরই মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে ফুলের চাহিদা থাকে ব্যাপক। আর তাই চলতি মৌসুমে ফুলের দাম ভালো পাওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগে থেকেই ফুলের পরিচর্যায় কমতি রাখেননি চাষিরা। বিজয় দিবসকে ঘিরে ঝিনাইদহের চার উপজেলায় ১৫ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রয় হয়েছে স্থানীয় ফুল বাজারে। ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পেরে এবার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন—এমনটাই প্রত্যাশা কৃষকদের। ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার গান্না গ্রামের ফুল চাষি মেহেদী হাসান রাজু।
তিনি গাঁদা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ করেছেন। অতি বৃষ্টির কারণে খেতের বেশির ভাগ ফুল নষ্ট হলেও কঠোর পরিচর্যা করে বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসের জন্য ফুল প্রস্তুত করেছেন। বিজয় দিবসকে ঘিরে যে ফুল বিক্রয়ের আশা ছিল সেটি পূরণ হওয়ায় তিনি খুবই খুশি। ১ বিঘা জমি থেকে ৯৩ হাজার টাকার গাঁদা, ১০ শতক জমিতে ৫৩ হাজার টাকার গোলাপসহ চন্দ্রমল্লিকা ও অন্যান্য ফুল ভালো দামে বিক্রয় করেছেন। বৃষ্টির কারণে যে ক্ষতি হয়েছিল, সেই লোকসান কাটিয়ে লাভবান হওয়ায় খুশি তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, সদর উপজেলার গান্না, কালিগঞ্জ, কোটচাদঁপুর ও মহেশপুরে ১০টি ফুলের বাজার রয়েছে। এ বছর ঝিনাইদহে ২০০ হেক্টরের বেশি জমিতে ফুলের চাষ করা হয়েছে। গাঁদা ১৩৯ হেক্টর, রজনিগন্ধা ৪৭ হেক্টর, গোলপ ১৬ হেক্টর, জারবেরা ৯ হেক্টর, গ্লাডিওলাস ৪ হেক্টর, চন্দ্রমল্লিকা ১ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। যেখানে ঝিনাইদহ সদর উপজেলাতে ১৫ হেক্টর, কালীগঞ্চ ৭৫ হেক্টর, কোটচাঁদপুর ৪০ হেক্টর, মহেশপুর ৭০ হেক্টরে বেশি জমিতে ফুল চাষ করা হয়েছে। গান্না বাজার ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর দুই বিঘা জমিতে চায়না গোলাপ, এক বিঘা জমিতে জারবেরা ও চার বিঘা জমিতে গাঁদা ফুল চাষ করেছেন। এবার ফুলের যে দাম সেই তুলনায় সার ও কীটনাশকের দাম অনেক বেশি। ফুল চাষ করে যে অনেক লাভ হবে, তেমন মনে হচ্ছে না। ফুল চাষ করতে গিয়ে বড় সমস্যা সার ও কীটনাশক। আগে এক বোতল কীটনাশক ৩০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায় পাওয়া যেত। এ বছর সেই কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে খরচ বেশি হচ্ছে লাভ কম হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ফুলের বাজারে দেশের রাজনৈতিক প্রভাব পড়াই ফুল বিক্রয় কিছুটা কম ছিল। এখন বাজার স্বাভাবিক আছে, বর্তমান মার্কেটে যে বেচাকেনা সেই তুলনাই গত এক সপ্তাহে ঝিনাইদহ থেকে ১৫ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রয় হয়েছে। এই ফুলগুলো জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। বর্তমান যে বাজার চলছে এমন বাজার থাকলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা সবাই লাভবান হবে বলে আশা করি। ফুল ব্যবসায়ী রিপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা দেশে যে পরিমাণ গাদা ফুল বিক্রি হয় তার প্রায় ৬২ ভাগই সরবরাহ করা হায় ঝিনাইদহের গান্না, কালিগঞ্জ ও কোটচাদঁপুর থেকে। বর্তমানে সনাতন ধর্মালম্বীদের বিয়ের যোগ যাত্রাসহ বিজয় দিবস এবং খ্রিষ্টান ধর্মের বড়দিনকে সামনে রেখেই ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকদের। বর্তমান ফুলের যে বাজার এমন বাজার থাকলে চাষিরা লাভবান হবেন। ফুল চাষি মেহেদী হাসান রাজু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে বাজারে এক ঝোপ্পা গাঁদা ফুল ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, গোলাপ ১২ টাকা থেকে ১৪ টাকা, রজনিগন্ধা ৬ থেকে ৭ টাকা মানভেদে বিক্রয় করতে পেরেছি। বিজয় দিবসকে ঘিরে যে আশা করেছিলাম তা পূরণ হয়েছে। সামনের দিবসকে ঘিরে এখন ফুলগাছ পরিচর্যা করতে হচ্ছে। তবে সার ও কীটনাশকের দাম নাগালের মধ্যে থাকলে আরও ভালো হতো। ঝিনাইদহ ফুল ঘরের মালিক ও গান্না বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জামির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবছরে রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য ফুলের বাজার কিছুটা মন্দা যাচ্ছে। এখন মোটামুটি স্বাভাবিক।
বিজয় দিবসে গাঁদা ফুল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, চন্দোমল্লিকা ৪ টাকা, রজনিগন্ধা ১০ থেকে ১২ টাকা, জারবেরা ১৮ থেকে ২০ টাকা, গোলাপ ১৫ টাকা পিস বিক্রয় করা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রয়ের টার্গেট ছিল। ঝিনাইদহ জেলায় পাঁচটা মার্কেটে প্রতিদিন ৬০ লাখ, ৫০ লাখ টাকার ফুল বিক্রয় হয়েছে। বিগত এক সপ্তাহ ধরে এই বেচাকেনা চলে আসছে। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ষষ্টি রন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝিনাইদহ জেলায় এ মৌসুমে ২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকারের ফুল চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে ফুল সংগ্রহ চলছে।
ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকার কারিগরি পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করে চলেছি। আমরা আশা করছি সারা মাসজুড়ে ফুল সংগ্রহ ও বিক্রয় চলবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV
কমেন্ট বক্স