ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৬ লাখ টাকা বেতনের তাকসিম যুগের অবসান

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় : ১৬-০৮-২০২৪ ০১:৫৫:২৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ১২-১০-২০২৪ ১১:১২:৫০ অপরাহ্ন
৬ লাখ টাকা বেতনের তাকসিম যুগের অবসান
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। বিভিন্ন সময় সবমিলিয়ে সাতবার তার পদের মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ বছর ধরে ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে তাকসিমের মাসিক বেতন সবশেষ ছিল ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
 করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয় পৌনে ২ লাখ টাকা। দুর্নীতি  অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও তাকসিম একই পদে দীর্ঘ সময় থেকে যান সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাধে। কিন্তু সরকার পতনের পর বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ১৫ বছর ধরে একই পদে থাকা ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা বেতন নেওয়া ঢাকা ওয়াসার এমডি পদ থেকে তাকসিমের যুগের অবসান ঘটেছে।

সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে সপ্তমবারের মতো এই পদে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার পানির দাম ১৬ বার বাড়িয়েছেন সমালোচিত এই এমডি। বর্তমানে তিনি দেশে আছেন, না কি বিদেশে চলে গেছেন সেটি নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। যদিও তাকসিম এ খান  তার স্ত্রী ও সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।যেভাবে তাকসিম যুগের অবসান

আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে পরে অনেক মন্ত্রী  এমপিসহ দলটির নেতাকর্মীরাও অনেকে বিদেশে পালিয়েছেন  কেউবা আত্মগোপনে আছেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ মনোনীত পদগুলোতে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। অনেকে বাধ্য হোন পদত্যাগ করতে। এই অবস্থায় পদত্যাগ করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ  দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলরাও লাপাত্তা হয়েছেন। সেই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না  তারা ইচ্ছে করেই গা ঢাকা দিয়েছে, অফিসও করছেন না। তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। তিনি নিজেও গা ঢাকা দিয়েছিলেন  অফিসও করছিলেন না। সেই সঙ্গে এই এমডির অনুসারী বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ঢাকা ওয়াসায় অফিস করতে আসেননি গত কয়েকদিন।বুধবার (১৪ আগস্ট) অনলাইন মাধ্যমে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওয়াসার এক কর্মকর্তা। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি জানান, পদত্যাগপত্রে অসুস্থতা জনিত কারণে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে অপারগতার কথা জানিয়েছেন তাকসিম এ খান।

যদিও এই এমডির পদত্যাগের বিষয়ে গত মঙ্গলবার থেকেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। সার্বিক বিষয় জানতে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কারণ তার সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর বারবার বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।

এছাড়া, গত রোববার থেকে কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে এমডিসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছেন ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।

জানা গেছে, এমডি তাকসিম এ খান সম্প্রতি অনলাইনে ঢাকা ওয়াসার অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই তাকসিম এ খান এক দিনও নিজের দপ্তরে আসেননি। 

তাকসিমের কারণে ব্যয় বেড়েছে ঢাকা ওয়াসার 

তাকসিম এ খানের আমলে ঢাকা ওয়াসায় বৈদেশিক ঋণের টাকায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর ফলে ঢাকা ওয়াসাকে ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পে ঢাকা ওয়াসার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং বাস্তবায়নের পর তা চালু করতে না পারার কারণে সংস্থাটির ব্যয় বেড়েছে। যা হয়েছে সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের কারণেই।

গত ১৫ বছরে ঢাকা ওয়াসায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তাকসিম এ খান। ওয়াসা আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তবে  অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে পরিচালনা করতেন তাকসিম। এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে। এতে তাকসিমের কিছুই হয়নি। বরং তার অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ায় সরে যেতে হয় সংস্থাটির সাবেক এক চেয়ারম্যানকে। 

তাসকিম খানকে ঘিরে দুর্নীতি চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা 

স্থানীয় সরকার  পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন  ঢাকা ওয়াসার এমডি তাসকিম খানের চুক্তির মেয়াদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। ১২ বছর ধরে তিনি একটার পর একটা চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছেন। এই তথ্যগুলো  ছবিসহ তার দুর্নীতির চিত্র  এমনকি তার চেহারাও মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে গেছে। তার চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তাকে ঘিরে যে দুর্নীতি চক্র গড়ে উঠেছে  সেই চক্র এখনো ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় আছে। চক্রটির সাথে জড়িত কেউ কেউ এখনও সক্রিয় আছে কিংবা লুকিয়ে আছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সচিবালয় সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।

এ এফ  হাসান আরিফ বলেন, যেখানে একটি বড় বাজেট বরাদ্দ থাকে এবং কর্মকাণ্ড থাকে সেখানে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। দুর্নীতির পথ খুলে যায়। সে জায়গাগুলো বন্ধ করা আমাদের জন্য একান্ত জরুরি। যারা সরাসরি দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। ফাঁকফোকর দিয়ে যে দুর্নীতি হয়ে গেছে সেটি হয়ে গেছে৷ কিন্তু আগামীতে এমন হলে আমার নজরে নিয়ে আসবেন। অন্তত মূলনীতিটি যদি আমরা ঠিক করে দিয়ে যেতে পারি এবং সে ধারাবাহিকতায় চললে আগামীতে দুর্নীতি কমে আসবে। যদি আমরা ন্যায়-নীতি ঠিক করতে পারি দুর্নীতির এই জায়গাটা অনেকটা সীমিত হয়ে যাবে। আমাদের সামনে অনেক বড় কাজ। অনেক দিনের জঞ্জাল জমে আছে। এটা এক-দুই দিনে ঠিক হবে না। সবার সহযোগিতা থাকলে এটা ধাপ

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ