উচ্চ ফলনশীল সয়াবিনের জাত উদ্ভাবন করেছে বশেমুরকৃবি
দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় :
১৭-০৮-২০২৪ ০৪:২০:৩৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১২-১০-২০২৪ ১০:৫৮:২১ অপরাহ্ন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) ‘বিইউ সয়াবিন-৫’ নামে উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এটি জলাবদ্ধতাসহনশীল, স্বল্পজীবনকাল ও দেশের সবচেয়ে বড় দানার সয়াবিনের জাত।
তাইওয়ানের এশিয়ান ভেজিট্যাবল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (এভিআরডিসি/ওয়ার্ল্ড ভেজিট্যাবল সেন্টার), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর থেকে প্রায় ২০০ জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে ২০০৬ সাল থেকে বিভিন্ন আঙ্গিকে সয়াবিন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বশেমুরকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগ।
এ পর্যন্ত সয়াবিন উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ৬ জন পিএইচডি ও ১৮ জন শিক্ষার্থী এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায়ই সয়াবিনের পরিপক্বতার শুরুতেই সাইক্লোনের জন্য আকস্মিক অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়। ফলে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
এতে সয়াবিনের প্রভূত ক্ষতি হয়। সে জন্যই উপকূলীয় অঞ্চলের সয়াবিন চাষিদের দীর্ঘদিন ধরে স্বল্পজীবনকাল ও জলাবদ্ধতাসহনশীল জাতের চাহিদা ছিল। সে জন্যই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে নিবিড় গবেষণা করা হয়।
জাতটি উদ্ভাবন টিমের প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল করিম জানান, এভিআরডিসি থেকে সংগৃহীত বিডি২৩৩৪ জার্মপ্লাজমটি উচ্চ ফলনের পাশাপাশি সাতদিন ধরে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে কৃষক পর্যায়ে এর সঠিকতা যাচাই করার জন্য নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জাতটির মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সম্পৃক্ত করে রবি ও খরিফ মৌসুমেই চাষ করা হয়।
দীর্ঘমেয়াদী এ গবেষণায় আর্থিক সহযোগিতা করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বশেমুরকৃবির গবেষণা বিভাগ। কৃষকের মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় বিভিন্ন আঙ্গিকে সহযোগিতা করেছে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া নামে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট কৃষক ও গবেষকদের মতামতের ভিত্তিতে বিডি২৩৩৪ জার্মপ্লাজমটি বিইউ সয়াবিন-৫ নামে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগে নিবন্ধন করা হয়। বিভিন্ন উপজেলায় জাতটির ফলন পাওয়া গেছে ৩.৫ মেট্রিক টন।তিনি আরও জানান, দেশের অন্য জাতের জীবনকাল যেখানে ১০০-১১০ দিন; সেখানে বিইউ সয়াবিন-৫ মৌসুমভেদে ৭৫-৮৫ দিনেই পরিপক্ব হয়।
ফলে সয়াবিনের ফল পাকার প্রাক্কালে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আকস্মিক জলাবদ্ধতা থেকে জাতটি রক্ষা পাবে। বিইউ সয়াবিন-৫ এর ১০০০ বীজের ওজন ২৮৫ গ্রাম, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান যে কোনো জাতের চেয়ে বেশি। জাতটির প্রোটিনের পরিমাণ ৩৮% এবং তেল ২০%। বাংলাদেশে এখনো পশু ও মাছের খাদ্য হিসেবেই মূলত সয়াবিন ব্যবহৃত হয়।
২০১৪ সালে বশেমুরকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগ থেকে বিইউ সয়াবিন-১ নামে খর্বাকৃতি ও অপেক্ষাকৃত কম সময়ে পরিপক্ব উচ্চ ফলনশীল এবং ২০২০ সালে বিইউ সয়াবিন-২ নামে উচ্চ ফলনশীল খরাসহিষ্ণু, ২০২৩ সালে বিইউ সয়াবিন-৩ এবং বিইউ সয়াবিন-৪ নামে ২টি লবণসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করা হয়।
যা কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, বশেমুরকৃবি উদ্ভাবিত প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী সয়াবিনের জাতসমূহ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে।
তাছাড়া জাতগুলোর বীজের আকার দেশের প্রচলিত জাতের তুলনায় অনেক বড় হওয়ায় এবং জীবনকাল কম ও প্রোটিনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হওয়ায় দেশের পশু ও মাছের খাবারের উপকরণ হিসেবেও জাতগুলোর ব্যাপক চাহিদা আছে। উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোনের কারণে হঠাৎ জলাবদ্ধ সৃষ্ট জমিতে সয়াবিনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নতুন জাত বিইউ সয়াবিন-৫ বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV
কমেন্ট বক্স