ভারতের কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে পুলিশকে সরিয়ে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। পুলিশের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় বাহিনী সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সকে (সিআইএসএফ) নিয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা ঘটনার মামলার শুনানি হয়। বেঞ্চের অন্য দুজন বিচারপতি ছিলেন জেবি পারদিওয়ালা ও মনোজ মিশ্র।শুনানির সময় ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দেরি করে মামলা দায়ের, কলকাতা পুলিশের ভূমিকা, হাসপাতালে দুষ্কৃতকারীদের হামলা, অধ্যক্ষকে বাঁচানোর চেষ্টা নিয়ে কলকাতা পুলিশ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষকে কার্যত ভর্ৎসনা করেন আদালত। পর্যবেক্ষণে এ নিয়ে কথা বলার পর হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের পরিবর্তে সিআইএসএফকে নিয়োগ করার নির্দেশ দেন।
আগামী বৃহস্পতিবার সিবিআইকে স্ট্যাটাস রিপোর্ট ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে হাসপাতালে হামলার বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই দিনই এ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
এদিকে আজও আর জি কর হাসপাতালের নারী চিকিৎসকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে কলকাতা শহরসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। প্রতিবাদে নামেন বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষও।
মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যায়ের মরকতকুঞ্জ থেকে শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট প্রতিবাদ মিছিল বিটি রোড ধরে সিথির মোড় পর্যন্ত যায়। অন্যদিকে রাজ্য স্বাস্থ্যভবন অভিযানে নামে বিজেপির ছাত্রসংগঠন এবিভিপি বা নিখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ।
তারা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের দিকে এগোলে পুলিশ ওই মিছিল আটকে দেয়। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বেরিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আজ বিকেলে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কলকাতার গনেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত যায়।
অপর দিকে আজও বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এই হত্যকাণ্ডের দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলিশ মন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ দাবি করেন। একই দাবি করেন রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী।কলকাতার শিল্পীসমাজও আজ প্রতিবাদ করেছে। তারা একডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে তাদের তুলিতে প্রতিবাদের ভাষা তুলে ধরে।
৯ আগস্ট উত্তর কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে এক নারী চিকিৎসকের মরদেহ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তে বলা হয়েছে, ওই নারী চিকিৎসককে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁর শরীরের বাইরের অংশে ১৬টি ও ভেতরে ৯টি ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। যৌন নির্যাতনেরও আলামত পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে সঞ্জয় রায় নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।