শিশুদের খাবার ও চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাবা-মায়েরা
দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় :
২৩-০৮-২০২৪ ০২:০৯:৫৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১২-১০-২০২৪ ১০:০৭:৪২ অপরাহ্ন
গৃহবধূ মুন্নি আক্তারের বসতঘরে হাঁটুসমান পানি। জেলা শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা এই নারীর তিন বছর বয়সী ছেলে মো. এয়াছিন জ্বরে কাতরাচ্ছে। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুন্নি আশ্রয় নিয়েছেন নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর এম এ রশিদ উচ্চবিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে। ছেলেকে যে চিকিৎসকের কাছে নেবেন, ওষুধ কিনে খাওয়াবেন, সেই সামর্থ্য নেই। মুন্নি বলেন, ‘কার কাছে নিয়ে যাব অবুঝ সন্তানকে। হাতে টাকাপয়সাও নেই। তাই ছেলেকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই নারীর কোলের শিশুর এমন কষ্টের কথা জানার পর নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখারকে বিষয়টি জানানো হয়। সিভিল সার্জন তাৎক্ষণিক মেডিকেল টিম পাঠানোর কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি তথ্য দেন, জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য তাঁর দপ্তর থেকে ৮৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
যদিও গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং আজ সকালে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয় এবং স্থানীয় সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় কোনো মেডিকেল টিমের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
শুধু আশ্রয়কেন্দ্রে আসা শিশুদের অসুস্থতা নয়, শিশুদের খাবার নিয়েও সংকটের মধ্যে পড়েছেন তাদের মা–বাবা। এম এ রশিদ উচ্চবিদ্যালয় ভবনের নিচতলায় আশ্রয় নেওয়া শিশু তানহাকে দেখা গেলে দুজন নারীর সঙ্গে মুড়ি আর চানাচুর খাচ্ছে। খাবারের বিষয়ে জানতে চাইতেই তানহার মা শিউলী আক্তার বলেন, তাঁর দুই বাচ্চা। একজন তানহা (৬), আরেকজন তানভি (৪)। দুই দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন, শিশুদের কোনো খাবার দেননি কেউ। একজন এক প্যাকেট বিস্কুট দিয়ে গেছেন। শুকনা বিস্কুট খাইয়ে বাচ্চাকে কতক্ষণ রাখা যায়? প্রশ্ন রাখেন এই নারী।অস্থায়ী এই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৭০টি পরিবার, যাদের বেশির ভাগের বাড়িই শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকায়। নুর আলম (৫০) নামের একজন বলেন, এলাকায় যাঁদের অবস্থা ভালো, তাঁরা সহযোগিতা করছেন। তবে সরকারিভাবে কোনো ত্রাণসহায়তা এখনো পাননি। গতকাল রাতের খাবার খেয়েছেন ১২টার পর। এলাকার একজন খাবার দিয়ে গেছেন। আজ শুনেছেন পৌরসভার অব্যাহতি পাওয়া মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান খাবার পাঠাবেন। মো. সোলেমান (৬৭) নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, তাঁর ঘরের ভেতর হাঁটুসমান পানি ঢুকে পড়ায় তিনি দুই দিন আগে এই আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। এর আগে কখনো এমন পানি এই শহরে দেখেননি তিনি। পানিতে তাঁর ঘরের বেড়াগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।
একইভাবে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানান আবু তাহের, মো. মোস্তফা, তাহেরা খাতুন, রৌশন আক্তারসহ অনেকে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টির পরিমাণ আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় কিছুটা কমেছে। আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪৪ মিলিমিটার। গতকাল সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীতে ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্র। কেন্দ্রটির পর্যবেক্ষক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টির পরিমাণ আরও কমে আসতে পারে। জেলা শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, মাস্টারপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, খন্দকারপাড়া, কৃষ্ণরামপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকায় সড়কের ওপর প্রায় হাঁটুসমান পানি। এ ছাড়া বাড়িঘরগুলোর কোথাও হাঁটুপরিমাণ, কোথাও আরও বেশি পানিতে ডুবে আছে। বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও পানি কমছে না। ফেনীর দিক থেকে উজানের পানির চাপ সেনবাগ ও বেগমগঞ্জ হয়ে আশপাশের উপজেলায় ঢুকে পড়ায় বন্যা পরিস্থিতি কার্যত অপরিবর্তিত রয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV
কমেন্ট বক্স