‘তাঁরা খাবার চান না, তাঁরা বাঁচতে চান’, ফেনী থেকে তাসরিফ
দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় :
২৩-০৮-২০২৪ ০৭:১৫:৪৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১২-১০-২০২৪ ১০:০৫:৪৯ অপরাহ্ন
বন্যার খবরে সবার আগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে যেতে চান তরুণ গায়ক তাসরিফ খান। সহায়তাও তুলতে দেখা গেছে। কিন্তু এ নিয়ে অনেকের কটু কথা শুনতে হয়। চেয়েছিলেন এবার আর বন্যাকবলিত এলাকায় যাবেন না। তবে আর্থিকভাবে সহায়তা করবেন।
তারপরও ছুটে গিয়েছেন ফেনীতে। শুক্রবার গভীর রাতে (প্রায় দুইটা বাজে) ফেনীর অবস্থা ও আজকের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বললেন তাসরিফ। সকাল থেকে ‘তাসরিফ স্কোয়াড ও কিটো ভাই টিম’ একযোগে ১৯টি ওয়াটার বোট নিয়ে উদ্ধার শুরু করেছেন। সেগুলো নিয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি হলেন তাসরিফ।
তাসরিফ খান: এখনো ফেনীতেই আছি। আমরা দুটি স্পিড বোট নিয়ে ফেনীতে এসেছি। এখানকার ডিসি মহোদয়ের সঙ্গে কথাও বলেছি। পরে ডিসির ইচ্ছায় আমাদের বোট দুটি সেনাবাহিনী নিয়েছে। আমরা যেহেতু সাহায্য করতে এসেছি, তারাও হেল্পলেস সিচুয়েশনে আছে। বোট দিয়ে দিয়েছি। কেউ না কেউ হেল্প করবে। যে কারণে গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা নিজেরা সরাসরি কিছুই করতে পারিনি। আজ শুক্রবার ভোর থেকে আমরা নিজেদের ফান্ডে আরও ১৭টা স্পিড বোট দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাব।তাসরিফ খান: আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ভালো জানা আছে। নিজেরাও অনেকের সঙ্গে কথা বলছি। যা মনে হলো, ফুলগাজী, পরশুরাম, আনন্দপুর এলাকাগুলোতে মানুষ আটকা পড়েছেন, সেই এলাকায় আগে যাব। সেনাবাহিনীর সঙ্গেই আমরা যাব। আমাদের সঙ্গে ওয়াকিটকি থাকবে। যেন সবাই আমাদের খোঁজ করতে পারে।
কারণ, এখন কোথাও কোনো নেটওয়ার্ক নেই। তাসরিফ খান: স্থানীয় লোকজন আমাদের সঙ্গে আছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমরা এই তিনটি এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের ভাষ্য, তাঁরা খাবার চান না, তাঁরা বাঁচতে চান। চারদিকে মানুষ শুধু বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। কেউ কেউ টিনের ঘরের চালের ওপর অবস্থান করছেন। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে ঘর। অবস্থা এতটাই খারাপ, কল্পনারও বাইরে। আপনারা এখন পর্যন্ত কতজনের মারা যাওয়ার কথা জেনেছেন, জানি না। ৮ থেকে ১০ জন হয়তো। কিন্তু আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কথা বলে জানতে পারছি, এ সংখ্যা অনেক গুণ বেশি। ফুলগাজী পশুরামের অবস্থা ভালো নাতাসরিফ খান: সিলেটে যে এলাকায় বন্যা হয়েছিল, তাঁরা কিন্তু পানি নৌকার সঙ্গে ইউজ টু ছিলেন। কিন্তু এটা এমন একটা অঞ্চল, এখানে কোনো নদী নেই, নৌকা নেই। তাঁরা পানিবন্দী অবস্থায় টিকতে পারছেন না। বেশির ভাগ মানুষ জীবনে বন্যাই দেখেননি। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না। এদিকে পানি বাড়ছে। আমরা এখানে দেখছি প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে।
একটার সময় রাতের খাবার খেয়ে দেখি পানি দুই আঙুল পরিমাণ বাড়ছে। রাতেও বৃষ্টি হয়েছে। তাসরিফ খান: সিলেটের অভিজ্ঞতা পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছি। বন্যার প্রথম দুই দিন রেসকিউটা বেশি দরকার, পানি প্রয়োজন হয়। তৃতীয় চতুর্থ দিন থেকে শুকনা খাবার দরকার হয়। আমরা সেগুলোর চেষ্টাও করছি। কারণ, আমরা এখনো ফান্ড রাইজ করছি না। স্বাধীনভাবেও কাজ করছি না। সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের রেখেছে। আমাদের বেশ কিছু এলাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ঝুঁকির জন্য যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে জেনেছি, এমনও হয়েছে বেশ কিছু জায়গায় পাঁচটা বোট গিয়েছে, হয়তো একটা বোট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো আছে কিন্তু যোগাযোগ নেই। যে কারণে নিষেধ করেছে। তবে স্বাধীনভাবেই আমরা কাজের চেষ্টা চালাব। আমরা ঝুঁকির চিন্তা করব না, মানুষকে বাঁচাতে হবে। মাত্র খবর পেলাম রাতে কয়েক শ স্পিড বোট ঢুকেছে। আশা করছি, মানুষের পাশে সবাই মিলে দাঁড়াতে পারব।
তহবিল সংগ্রহ নিয়ে কী ভাবছেন?
তাসরিফ খান: আমরা প্রথম দিন কখনোই ফান্ড রাইজ করি না। আমরা সিলেটে নিজেদের এক লাখ টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম। এবারও নিজেদের টাকা নিয়ে তাসরিফ স্কোয়াড ও কিটো ভাইয়ের টিম এসেছি। শিক্ষার্থীসহ ২৫ জনের একটি টিম আছে আমাদের সঙ্গে। আজ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কত মানুষকে সহায়তা করতে পারব, কত টাকা লাগবে, সেগুলো বিবেচনায় আমরা হয়তো ফান্ড রাইজ করতে পারি।তাসরিফ খান: মানুষের জন্য কিছুটা হলেও ভালো করতে পারি, সে জন্য কাজ করতে উৎসাহিত হই। নিজে আনন্দ পাই। এ জন্যই তো বলা হয়, মানুষ মানুষের জন্য। তবে এবার একেবারেই দুর্গতদের জন্য কাজ করার ইচ্ছা ছিল না। কারণ, অনেক মানুষ আসলে যেভাবে প্রতিদান দিয়েছে, সেগুলো হজম করা কঠিন। দুই বছর ধরে নোংরাভাবে ট্রল করেছে, ইচ্ছাই ছিল না ফেনী আসি। পরে কিটো ভাই ফোন দিয়ে উৎসাহ দিয়েছে। আমার সহযোগিতা চেয়েছিল। পরে মনে হলো মানুষ মানুষের কথা বলুক। তারা গালি দিতে থাকুক, আমি দেখি দুইটা মানুষকে হেল্প করতে পারি কি না। সেই লক্ষ্য নিয়েই এসেছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV
কমেন্ট বক্স