মাহফুজের বাড়িতে বন্যার পানি, জামিলদের ঘরে কোমরসমান
বিনোদন ডেস্ক
আপলোড সময় :
২৪-০৮-২০২৪ ০৫:২৮:৫১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১২-১০-২০২৪ ১০:০২:২৮ অপরাহ্ন
দেশের বন্যা উপদ্রুত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কমে এসেছে। আজ শনিবারও সেসব এলাকায় বৃষ্টি কম হতে পারে, তবে তিন বিভাগের অনেক স্থানে আজ আবার মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত কয়েক দিনের বন্যায় পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ। বিনোদন অঙ্গনের কারও পৈতৃক বাড়ি এসব এলাকায়। ভয়াবহ এই বন্যায় তারকাদের কারও বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকেছে, কারও আত্মীয়স্বজন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত।
অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক মাহফুজ আহমেদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে। এই বন্যায় গ্রামের বাড়ির ওঠানে এখন পানি। কয়েক দিন ধরে এই অবস্থা। এখনো সবার খোঁজখবর রাখতে পারছেন। মাহফুজ মনে করছেন, আরেকটা ধাক্কা এলেই ঘরে পানি ঢুকে পড়বে। আজ সকালে প্রথম আলোকে মাহফুজ বললেন, ‘চৌমুহনী, নোয়াখালী, ফেনী, পরশুরাম, ছাগলাইয়ার দিকে যেভাবে পানির ঢল এসেছে, আমাদের এদিকটায় তা আসে নাই এখনো। তাই আমাদের ওদিকটায় বাড়িঘর ভেসে যায়নি। মাহফুজ আহমেদ ঢাকা আর সিডনি মিলিয়ে থাকলেও সময়–সুযোগ পেলেই ছুটে যান রামগঞ্জে। মা আর ভাই সেখানেই থাকেন। মাহফুজের মতে, আমার সবকিছু ওখানে।
তিনি বলেন, ‘ছোট ভাই, ওর পরিবারের সঙ্গে মা থাকেন। ঢাকা-রামগঞ্জে মা যাওয়া–আসার মধ্যে থাকেন। এখন ঢাকায় আছেন। বন্যায় বাড়ির ওঠানে পানি। আর একটা ধাক্কা এলেই ঘরে পানি ঢুকে যাবে। আল্লাহ আল্লাহ করছি। পুরো এলাকাটাই আমাদের আত্মীয়স্বজন। একে অপরের খোঁজখবর নিচ্ছি। শুনেছি গতকাল পানি বাড়ে নাই। বাড়লে আর সামলানো যাবে না। গ্রামে তো অনেক কিছু থাকে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তবে একটা জিনিস আছে আমাদের এলাকায় সবচেয়ে সুন্দর, সবাই সবার পাশে থাকে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে—এটাই আমাদের এলাকার শক্তি। একতাবদ্ধ হয়ে সবকিছু মোকাবিলা করার। সাধারণত অস্ট্রেলিয়ায় থাকা হলেও এ সময় দেশে, বিশেষ করে ঢাকায় থাকতে পারছি, এটাই ভালো লাগা। যেকোনো সময় গ্রামে ছুটে যেতে পারব। ভারতের জি বাংলার রিয়েলিটি শো মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার্স দিয়ে পরিচিতি পান জামিল হোসেন। এর পর থেকে নিয়মিত অভিনয় করছেন। মাঝেমধ্যে গানও গেয়ে থাকেন। এই তারকার গ্রামের বাড়ি মাইজদী শহরের বাবুনগরের হাসানহাট এলাকায়। বন্যায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।
জানালেন, ঘরে তাঁর কোমরসমান পানি। বন্যার ভয়াবহতা টের পেয়ে বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যরা শহরের আত্মীয়স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।
জামিল তাঁর এলাকার ও পরিবার সম্পর্কে জানালেন এভাবে, ‘সমতল থেকে উঁচু সিঁড়ি ছিল। তারপরও ঘরে পানি ঢুকেছে। কোমরসমান পানি। আজকে কিছুটা কমতেছে। কাল রোববার রাতে আমি যাব। আমার বাড়ির পাশে হাসানহাট হাইস্কুল, ওখানে নারী ও শিশু মিলিয়ে বিভিন্ন বয়সী ৭০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আমার টার্গেট হচ্ছে, তাঁদের যেন দুই-তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি। আমার জন্মে এ রকম বন্যা দেখিনি। এবার আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমার বোনের ছেলে ওখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা ও বিভিন্ন জায়গা থেকে যাঁরাই যাচ্ছেন, তাঁদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা মালেক আফসারীর শ্বশুরবাড়ি চৌমুহনীর নর্দনপুরে। দোতলায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও অন্য সবাই থাকেন। বন্যার পানি ঘরে ঢুকেছে বলে জানালেন এই নির্মাতা। তিনি বললেন, ‘খাট পর্যন্ত পানি। সবাই নিচতলা থেকে দোতলায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল থেকে তাঁদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। শুনেছি, কারেন্ট নাই, তাই মোবাইল চার্জ দিতেও পারছেন না। তবে অন্য মাধ্যমে খবর নিয়ে জানতে পেরেছি, পানি কমতে শুরু করেছে। জীবনের ৩০ বছর ফেনী শহরে কেটেছে নির্মাতা শিহাব শাহীনের। জন্মও এই শহরে। শহরের নাজির রোডের সেই বাড়িতে কেউ না থাকলেও শুনেছেন, বন্যার পানি প্লাবিত করেছে ওই এলাকার কয়েকটি জায়গা। শিহাব শাহীনের বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। ভাই-বোনও নেই, তিনি একা। তবে নোয়খালী সদরের সোনাপুর এলাকায় খালারা থাকেন। তাঁদের বাড়ির নিচতলায় বন্যার পানি ঢুকেছে, খবর পেয়েছেন। বন্যার ভয়াবহতার খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজন সবার খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় মুঠোফোনে কারও সঙ্গে এখন আর যোগাযোগ করতে পারছেন না শিহাব শাহীন।
আজ সকালে বললেন, ‘আজ সকাল থেকে আত্মীয়স্বজন কারও নম্বরে যোগাযোগ করতে পারছি না। তবে অন্য মাধ্যমে শুনেছি পানি বাড়েনি। আশা করছি কমে যাবে। আমার জন্ম ফেনীতে, ৩০ বছর পর্যন্ত কেটেছে ওখানে, এ রকম অবস্থা দেখিনি। কখনোই না। ’৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায়ও এমনটা দেখিনি। ফেনী শহরের নাজির রোডে রেলগেটের পাশে নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিমের বাড়ি। ওখানে ভাই ও তাঁর পরিবার থাকে। মা ঢাকা আর ফেনী মিলিয়ে থাকেন, এবার বন্যা শুরুর কয়েক দিন আগে তিনি ঢাকায় এসেছেন। এই বন্যায় তাঁদের বাড়ির গ্যারেজে পানি ঢুকেছে বলে জানালেন সেলিম। ঢাকায় থাকেন গায়িকা পুতুল। মা–বাবার বাড়ি ফেনী শহরে। গত কয়েক দিনে ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
এ কারণে পুতুলদের ফেনী শহরের উকিলপাড়ার বাড়ির দোতলা পর্যন্ত পানি উঠেছে। এই বাড়িতে পুতুলের ভাই তাঁর পরিবার নিয়ে থাকতেন। পাশে বড় বোনও থাকতেন। গত দুই দিনে বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। শহরের সেই বাড়িতে পানিবন্দী সবাই। গত বৃহস্পতিবার থেকে ভাই-বোনের খোঁজও পাচ্ছিলেন না পুতুল! গতকাল শুক্রবার রাতে ভাই ও তাঁর পরিবারের খোঁজ পেয়েছেন বলে প্রথম আলোকে জানান। তবে বোন ও তাঁর পরিবারের কোনো খোঁজ এখনো পাননি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV
কমেন্ট বক্স