দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে শিল্পকারখানা, বিপণিবিতান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
তাঁরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাসদস্যদের পাশাপাশি বিজিবি, পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে।
সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ, দোকান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর উচ্চপস্থ কর্মকর্তাদের সভায় এ আশ্বাস দেওয়া হয়।
জানা গেছে, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির নেতৃত্বে বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে বৃহস্পতিবার সকালে ব্যবসায়ীদের আরেক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী, সহসভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, আইসিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আনোয়ার উল আলম চৌধুরী ও ট্রান্সকম গ্রুপের গ্রুপ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন রহমান
বৃহস্পতিবার সকালের ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে, সে ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, এ ধরনের পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি করেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি সচল করার সাহস পাচ্ছেন না।
ব্যবসায়ী নেতারা এ–ও বলেন, ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ভবনের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় যেভাবে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, তাতে শিল্পকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ভর করেছে।
দেশের কোথাও পুলিশের কার্যক্রম নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটির মনোবলও ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় শিল্পকারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাসদস্যদের দৃশ্যমান উপস্থিতি ও তদারকি জোরদার করা আহ্বান জানানো হয় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।
এদিকে সন্ধ্যার বৈঠকে উপস্থিত এফবিসিসিআই, বিকেএমইএ ও দোকান মালিক সমিতির নেতারা জানান, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা গত বুধবার ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশের ব্যবসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চান। এর পরদিনই সেনাবাহিনীর দপ্তর থেকে ব্যবসায়ী নেতাদের ডেকে বৈঠক করা হয়। বৈঠকটি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে।
জানতে চাইলে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন,থানায় পুলিশ না থাকার সুযোগে বিভিন্ন এলাকার দোকানপাটে লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। নিরাপত্তার অভাবে শিল্পকারখানা চালু করতে পারছিলেন না অনেক উদ্যোক্তা।
এ জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। সেনাবাহিনী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার রাতে
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বন্ধের মাধ্যমে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে বাহিনী প্রধানেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই দিন সেনাসদরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানদের উপস্থিতিতে নবনিযুক্ত পুলিশের আইজিপি, র্যাবের মহাপরিচালক ও ডিএমপি কমিশনার সাক্ষাৎ করেন।
এদিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিল্পাঞ্চলে সেনাসদস্যদের টহল বাড়াতে অনুরোধ করি।
পাশাপাশি পণ্য বন্দরে আনা–নেওয়ার ক্ষেত্রেও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছি। সেনা কর্মকর্তারা আমাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সেল গঠনেরও অনুরোধ