৬ কোটি টাকা অনুদান পাচ্ছে ৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

আপলোড সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ০১:৩০:০৪ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ০১:৩৪:৫২ পূর্বাহ্ন

ঢাকা: দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে এবং শিক্ষার আলো সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ হাজার ১০০ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৬ কোটি ৪১ লাখ ২ হাজার টাকার বিশেষ অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। এই বিশাল অঙ্কের আর্থিক সহায়তা শিক্ষা খাতে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন দর্শনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত বিস্তারিত চিঠি জারি করা হয়েছে, যা সুবিধাভোগীদের মধ্যে স্বস্তি এনেছে।

এই বিশেষ অনুদান প্রদানের মাধ্যমে সরকার শিক্ষার সমতা নিশ্চিত করতে চাইছে। পাশাপাশি, যারা আর্থিক অসচ্ছলতা, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে পিছিয়ে পড়ছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যও এর পেছনে কাজ করছে। এই সহায়তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও ব্যবহৃত হবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করবে।

অনুদান বন্টন ও বিস্তারিত সুবিধাভোগী তালিকা: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই অনুদান দেশের প্রায় ৭ হাজার ১০০টি সত্তার মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে বন্টন করা হবে। প্রতিটি খাতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

প্রথমত, দেশের ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ১ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হবে। এই অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভৌত অবকাঠামো আধুনিকীকরণ, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ক্রয়, শ্রেণিকক্ষ সংস্কার এবং ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে ব্যয় করা যাবে। এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান উন্নত করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়ক হবে।

দ্বিতীয়ত, ২৫০ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রত্যেকে ৩০ হাজার টাকা করে মোট ৭৫ লাখ টাকা অনুদান পাবেন। এই বিশেষ সহায়তা মূলত সেই সকল শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য নির্ধারিত, যারা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন বা কোনো দৈব-দুর্যোগের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এটি তাদের চিকিৎসা ব্যয় বা ব্যক্তিগত সংকট মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হবে।

তৃতীয়ত, ৪ হাজার ৪৭ জন মাধ্যমিক পর্যায়ের (৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি) শিক্ষার্থী প্রত্যেকে ৮ হাজার টাকা করে মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা অনুদান পাবে। এই অর্থ শিক্ষার্থীদের বই কেনা, স্কুল ফি পরিশোধ এবং অন্যান্য শিক্ষা সংক্রান্ত খরচ মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

চতুর্থত, ১ হাজার ৪২৮ জন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রত্যেকে ৯ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা অনুদান পাবে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য এই সহায়তা তাদের উচ্চশিক্ষার পথে একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

পঞ্চমত, ১ হাজার ২৭৪ জন স্নাতক ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষার্থী প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাবে। এই অনুদান উচ্চশিক্ষারত শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কাজ, টিউশন ফি এবং অন্যান্য একাডেমিক ব্যয় মেটাতে সাহায্য করবে, যা তাদের উচ্চশিক্ষাকে আরও সুগম করবে।

এই বিস্তৃত অনুদান কর্মসূচি শিক্ষা খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। এটি প্রতিটি স্তরের শিক্ষার্থীর প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যা দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনুদান বিতরণ: স্বচ্ছতা ও দ্রুততা নিশ্চিতকরণ: অনুদান বিতরণের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ, স্বচ্ছ এবং দ্রুত করতে সরকার ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ সরাসরি তাদের নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে অনলাইনে পাঠানো হবে, যা অর্থ প্রাপ্তি প্রক্রিয়াকে ঝামেলামুক্ত করবে। অন্যদিকে, শিক্ষক-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস 'নগদ'-এর মাধ্যমে সরাসরি তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হবে। এই ডিজিটাল পদ্ধতি সুবিধাভোগীদের দোরগোড়ায় অর্থ পৌঁছে দেবে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে সহায়তা করবে। এটি সরকারের 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার লক্ষ্যের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অগ্রাধিকার নীতি ও সরকারের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি: এই অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু অগ্রাধিকার নীতি অনুসরণ করা হয়েছে, যা সরকারের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়। গত ১৭ জুন ২০২৫ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বাজেট শাখার উপসচিব লিউজা-উল-জান্নাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই অগ্রাধিকার তালিকা জানানো হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, দেশের অনগ্রসর এলাকার উন্নয়নশীল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি সাধনের প্রচেষ্টা স্পষ্ট।

এছাড়াও, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এই অনুদানের জন্য অগ্রাধিকার পেয়েছেন। ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, হেপাটাইটিস, ডায়াবেটিস, পক্ষাঘাত, বক্ষব্যাধি, কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন এবং দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই সহায়তার জন্য বিশেষভাবে বিবেচিত হয়েছেন। সমাজের দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, অসহায়, রোগাক্রান্ত, দরিদ্র, মেধাবী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাও এই অনুদানে অগ্রাধিকার পেয়েছেন। এই অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের এই বিষয়ে মন্তব্য করে বাসস'কে জানিয়েছেন, "সরকার শিক্ষাকে সবার জন্য সমভাবে বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে অনগ্রসর কিন্তু ভালো ফল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বিশেষ অনুদান বরাদ্দ অব্যাহত রয়েছে।" তার এই মন্তব্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষা পরিকল্পনা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার ইঙ্গিত দেয়।

উল্লেখ্য, অনুদান প্রদানের এই নীতিমালা গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর প্রণীত হয়েছিল। এই নীতিমালার আওতায় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জেলা পর্যায়ে এবং মন্ত্রণালয় পর্যায়ে শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিগুলো আবেদনপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে যোগ্য সুবিধাভোগীদের নির্বাচন করেছে, যা পুরো প্রক্রিয়াটিকে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করেছে।

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক: দুলাল হোসেন


অফিস :

প্রধান কার্যালয়: মৌচাক-১৭৫১, কালিয়াকৈর, গাজীপুর, ঢাকা।

ইমেইল : [email protected]

মোবাইল : +8801722328090