শাহরিয়ার খান আনাস, মাত্র ১৬ বছর বয়সের এক কিশোর, তিনি তার জীবনে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা তার জীবন এবং দেশের ইতিহাসের গতিপথকে চিরতরে বদলে দিয়েছিল। যখন পুরো দেশ বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল, যখন চারপাশে ছিল রক্তের বন্যা আর মৃত্যু, তখন এমন অনেকেই ছিল যারা তাদের ঘর থেকেও বের হতে ভয় পাচ্ছিল এবং অধিকার আদায়ের জন্য ও কথা বলার সাহস পাচ্ছিলো না।
কিন্তু আনাস, একজন স্কুল ছাত্র হয়েও, সামনে থাকা বিপদের কথা ভাবেননি; তিনি ভাবছিলেন ভবিষ্যতের কথা, ন্যায়বিচারের কথা, স্বাধীনতার কথা। তিনি হয়তো কেবল একজন কিশোর ছিলেন, কিন্তু তার হৃদয়ে বহন করছিলেন সেই বিপ্লব যা তার দেশের প্রয়োজন ছিল। তিনি বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের ছাত্র ক্ষমতায়নের এক গর্বিত উদাহরণ।
আনাস দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন, এবং ৫ আগস্ট সকালে তিনি তার পরিবারের কোন অনুমতি ছাড়াই, কাউকে কিছু না বলেই ঘর থেকে বের হয়ে যান। দেশের পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাওয়ায়, তার বাবা মা তাকে বিপ্লবে যুক্ত হতে মানা করেছিলো। কিন্তু আনাস এই দেশের ছাত্রদের, তার ভাই-বোনদের মরতে দেখে আর চুপ থাকতে পারেননি। তিনি তার মা বাবার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে ৫-ই আগস্ট সকালবেলা লং মার্চ এ যোগ দান করেন।
তার চিঠিতে সে তার বাবা-মার কাছে ক্ষমা চান, কারণ তিনি তাদের কথা রাখতে পারেননি। তিনি ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, এবং বিজয়ের অংশীদার হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিজয়ের স্বাদ পাওয়ার আগেই, সেইদিন ঠিক ১১ টা বেজে ১৮ মিনিট, চানখাঁরপুল, শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড সার্জারি ইনস্টিটিউট এর সামনে গুলিবিদ্ধ হোন। বুকে ২টি গুলি ও মাথায় ১ টি গুলি নিয়ে স্বাধীন বাংলার বুকে সেইদিন আনাস শহীদ হয়।
তার চিঠিতে সে তার বাবা-মার কাছে ক্ষমা চান, কারণ তিনি তাদের কথা রাখতে পারেননি। তিনি ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, এবং বিজয়ের অংশীদার হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিজয়ের স্বাদ পাওয়ার আগেই, সেইদিন ঠিক ১১ টা বেজে ১৮ মিনিট, চানখাঁরপুল, শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড সার্জারি ইনস্টিটিউট এর সামনে গুলিবিদ্ধ হোন। বুকে ২টি গুলি ও মাথায় ১ টি গুলি নিয়ে স্বাধীন বাংলার বুকে সেইদিন আনাস শহীদ হয়।
তার লিখে যাওয়া চিঠিটি নিচে সংযুক্ত করা হলো,
মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য কোরে বের হোলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বোসে থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাই রা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম কোরে যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের জীবন বিষর্জন দিচ্ছে।
একটি প্রতিবন্ধি কিশোর, ৭ বছরের বাচ্চা, ল্যাংরা মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেনো বোসে থাকবো ঘড়ে। একদিন তো মরতে হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় কোরে স্বার্থপরের মতো ঘরে বোসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যুও অধিক শ্রেষ্ঠ ।যে অন্যের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেয় সেই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেচে না ফিরি তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।
— আনাস
শাহরিয়ার খান আনাসের আত্মত্যাগ শুধু স্বাধীনতার মূল্যকেই স্মরণ করিয়ে দেয় না, বরং সেই সাহসের কথাও বলে যা সমস্ত বাধার মধ্যেও মানুষ কে অধিকার আদায় এর জন্য দাঁড় করায়। তার সাহস প্রমাণ করে দেয় একটি প্রজন্মের দৃঢ়তা, যারা কখনোই বলপ্রয়োগে চুপ করে থাকেনি। আনাস হয়তো এই যুদ্ধে নিজেদের বিজয় দেখতে পারেননি, কিন্তু তার মতো হাজারো শহীদ ও আহতদের কারণে আমরা আজ একটি ন্যায় ও স্বাধীন দেশের আশা করতে পারি।
আনাসের স্মৃতি এবং আবেগগুলোকে ধরে রাখতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার আত্মত্যাগের কথা মনে করিয়ে দিতে, ৮ই আগস্ট থেকে সেন্টার ফর এইড (সিএফএ) তাকে সম্মানিত করার কাজ গ্রহণ করে। শহীদদের গল্পকে জীবন্ত রাখার মিশনের অংশ হিসেবে, সিএফএ পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়াতে তার জন্য গ্রাফিতি ও দেওয়াল চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে এবং তার বাড়ির রাস্তার নামকরণ তার নামে করে।
তারা আনাসের সাহস এবং দেশের প্রতি তার অবদান টা ধরে তুলার চেষ্টা করে। এই প্রকল্প শুধুমাত্র শৈল্পিক চিত্রের জন্য নয়; এটি আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতির সাথে সংযোগ স্থাপনের একটি উপায়, আনাস এবং তার মতো সকল শহীদদের স্মৃতিতে এটি একটি উপহার। তাদের আত্মত্যাগ কখনো যেনো ভুলে না যাওয়া হয়, সেন্টার ফর এইড তাদের কাজ দ্বারা এটিই নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে।
এই গ্রাফিতির মাধ্যমে, তারা এমন এক ছেলের গল্প বলার চেষ্টা করেছে, যে শুধু একজন ছাত্র ছিল না, বরং এক উদ্যমী বিপ্লবী ছিল। দেয়ালে করা ওই চিত্রগুলো আনাসের আত্মত্যাগের সারমর্ম তুলে ধরে, আর তার চিঠিটি ছাত্রদের মনের অভ্যন্তরে থাকা বিদ্রোহী অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করে। এবং অন্য চিত্রগুলো দেশের পরিস্থিতি ও জাতীয় মনোভাবের সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়। সেন্টার ফর এইড এর সদস্যরা মনে করে যে এই ধরনের প্রকল্পগুলো শহীদদের আত্মত্যাগের চেতনা জাগিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বিশ্বাস এটি আমাদের সকলের দায়িত্ব যে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের অর্জিত স্বাধীনতার মূল্য স্মরণ করিয়ে দিই।
এটি শুধু সেন্টার ফর এইডের কাজের একটি ছোট অংশ। তাদের কাজটি যদিও সাধারণ মনে হতে পারে, এটি বৃহত্তর লক্ষ্য দ্বারা চালিত: দেশকে পুনর্নির্মাণ করা, সংহতি ফিরিয়ে আনা, এবং শহীদদের সম্মানিত করে রাখা যাতে এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে টিকে থাকে।
শাহরিয়ার খান আনাস এবং তার মতো অন্য শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের আজকের স্বাধীন জাতির পথ প্রশস্ত করেছে, এবং আমরা তাদের প্রতি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব। সেন্টার ফর এইডের এমন প্রকল্পের মাধ্যমে তারা তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে চায়, যাতে তারা এই শহীদদের শুরু করা কাজগুলো চালিয়ে যেতে পারে, ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে পারে, এবং চিরকাল তাদের এই স্বাধীনতার মূল্যের কথা মনে করিয়ে দিতে পারে।