বাউলসম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
এই বাউল সাধকের গাওয়া ‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে’, ‘তুমি মানুষ আমিও মানুষ’, ‘রঙের দুনিয়া তরে চায় না’, ‘প্রাণে সহে না দুঃখ বলব কারে’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইল’, ‘ওরে ভব সাগরের নাইয়া’, ‘মাটির পিঞ্জিরায় সোনার ময়নারে’, ‘সখী কুঞ্জ সাজাও গো’, ‘কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া’ প্রভৃতি গানগুলো এখনও দেশের মানুষের মুখে মুখে। এর মধ্যে ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটি বেশ শ্রোতাপ্রিয়। যেখানে তিনি অতীতের স্মৃতিতে ভেসেছেন।
তোলে ধরেছেন গ্রাম-বাংলার অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা।গানটি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে এই বাউলসম্রাটকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার একটা বিখ্যাত গানই আছে যেখানে বর্তমান ও অতীতের একটা চমৎকার তুলনা টেনে এনেছিলেন। গানের প্রথম দিকটা বোধ হয় এইরকম গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান/ মিলিয়া বাউলাগান আর মুর্শিদী গাইতাম/ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।’ সন্দেহ নেই গানটা মর্মস্পর্শী। কিন্তু একটা বিষয় এখানে লক্ষণীয়, মনে হয় আপনি যেন তুলনামূলকভাবে অতীতমুখী; বর্তমান আপনার কাছে বিশ্রী এবং বিভৎস। বর্তমান থেকে এ রকম মুখ ফেরালেন কেন?’
উত্তরে শাহ আব্দুল করিম বলেছিলেন, ‘বর্তমান আমার কাছে গৌণ কোনো বিষয় নয়। আমার চোখের সামনে এই পরিবেশ-পরিপার্শ্ব আমূল বদলে গেছে। নগরায়ন ও যন্ত্রসভ্যতার বিকাশ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে পরিবর্তন করেছে। আমি একে খারাপ চোখে দেখি না। কিন্তু আমার কান্না পায়, ভেতরে তীব্র হাহাকার অনুভব করি চোখের সামনে অবিকল যন্ত্র হয়ে উঠলো মানুষগুলো। ‘মন’ বলতে আমরা যে জিনিসটাকে বুঝাই সেটার চিহ্নমাত্র থাকল না আর। তা ছাড়া সবচেয়ে আক্ষেপ লাগে যখন দেখি এই বিজ্ঞান বা যন্ত্রসভ্যতার ফল ভোগ করছে কয়েকজন হাতেগোনা কোটিপতি। এই যন্ত্রসভ্যতা ফলত ধনী-গরিবের মধ্যকার বৈষম্যকে আকাশ-পাতাল পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
আপনারা আমার গাঁয়ে এসেছেন, দেখে যান এখানে, এই বিশাল ভাটি অঞ্চলজুড়ে মানুষগুলো কী অপরিসীম দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে বাস করে। যখন মাঝেমাঝে শহরে স্তম্ভিত হয়ে এই ব্যবধান লক্ষ্য করি। লোকে কয়, আমি নিরণ্ণ দুঃস্থ মানুষের কবি। আমি আসলে তাক ধরে দুঃস্থদের জন্য কিছু লিখিনি। আমি শুধু নিজের কথা বলে যাই, ভাটি অঞ্চলের একজন বঞ্চিত নিঃস্ব দুখী মানুষ আমি, আমার কথা সব হাভাতে মানুষের কথা হয়ে যায়… দ্যাখেন তো এই অঞ্চল ঘুরে, মানুষের আয়ের কোনো উৎস আছে কিনা? (করিম শাহ ক্রমশ উত্তেজিত এবং তাঁর চোখ দুটো আর্দ্র হয়ে উঠছে) চারদিকে ভাসান পানি। জলে থৈথৈ করছে প্রতিটি বাড়ির উঠান। মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে? (করিম শাহের চোখে অশ্রুধারা) দিনে তিনবেলা নয়, শুধু একবেলা যদি দু’মুঠো খেতে না পারে, এই জন্ম কি মানুষের জন্ম?’
এই পৃথিবীটা একদিন বাউলের হবে’‘এই পৃথিবীটা একদিন বাউলের হবে’
প্রসঙ্গত, ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ধলআশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন লোকগানের এই কিংবদন্তি শিল্পী। তাঁর বাবার নাম ইব্রাহীম আলী ও মা নাইওরজান।
আব্দুল করিম জীবনভর তাঁর গানে অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির কথা বলে গেছেন। তাঁর গানে যেমন প্রেম-বিরহ ছিল, তেমনি ছিল খেটেখাওয়া মানুষের কথা। একই সঙ্গে আধ্যাত্মিক ভাবনাও রয়েছে এই শিল্পীর সৃষ্টিকর্মজুড়ে।
এই বাউল সাধকের গাওয়া ‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে’, ‘তুমি মানুষ আমিও মানুষ’, ‘রঙের দুনিয়া তরে চায় না’, ‘প্রাণে সহে না দুঃখ বলব কারে’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইল’, ‘ওরে ভব সাগরের নাইয়া’, ‘মাটির পিঞ্জিরায় সোনার ময়নারে’, ‘সখী কুঞ্জ সাজাও গো’, ‘কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া’ প্রভৃতি গানগুলো এখনও দেশের মানুষের মুখে মুখে। এর মধ্যে ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটি বেশ শ্রোতাপ্রিয়। যেখানে তিনি অতীতের স্মৃতিতে ভেসেছেন।
তোলে ধরেছেন গ্রাম-বাংলার অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা।গানটি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে এই বাউলসম্রাটকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার একটা বিখ্যাত গানই আছে যেখানে বর্তমান ও অতীতের একটা চমৎকার তুলনা টেনে এনেছিলেন। গানের প্রথম দিকটা বোধ হয় এইরকম গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান/ মিলিয়া বাউলাগান আর মুর্শিদী গাইতাম/ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।’ সন্দেহ নেই গানটা মর্মস্পর্শী। কিন্তু একটা বিষয় এখানে লক্ষণীয়, মনে হয় আপনি যেন তুলনামূলকভাবে অতীতমুখী; বর্তমান আপনার কাছে বিশ্রী এবং বিভৎস। বর্তমান থেকে এ রকম মুখ ফেরালেন কেন?’
উত্তরে শাহ আব্দুল করিম বলেছিলেন, ‘বর্তমান আমার কাছে গৌণ কোনো বিষয় নয়। আমার চোখের সামনে এই পরিবেশ-পরিপার্শ্ব আমূল বদলে গেছে। নগরায়ন ও যন্ত্রসভ্যতার বিকাশ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে পরিবর্তন করেছে। আমি একে খারাপ চোখে দেখি না। কিন্তু আমার কান্না পায়, ভেতরে তীব্র হাহাকার অনুভব করি চোখের সামনে অবিকল যন্ত্র হয়ে উঠলো মানুষগুলো। ‘মন’ বলতে আমরা যে জিনিসটাকে বুঝাই সেটার চিহ্নমাত্র থাকল না আর। তা ছাড়া সবচেয়ে আক্ষেপ লাগে যখন দেখি এই বিজ্ঞান বা যন্ত্রসভ্যতার ফল ভোগ করছে কয়েকজন হাতেগোনা কোটিপতি। এই যন্ত্রসভ্যতা ফলত ধনী-গরিবের মধ্যকার বৈষম্যকে আকাশ-পাতাল পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
আপনারা আমার গাঁয়ে এসেছেন, দেখে যান এখানে, এই বিশাল ভাটি অঞ্চলজুড়ে মানুষগুলো কী অপরিসীম দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে বাস করে। যখন মাঝেমাঝে শহরে স্তম্ভিত হয়ে এই ব্যবধান লক্ষ্য করি। লোকে কয়, আমি নিরণ্ণ দুঃস্থ মানুষের কবি। আমি আসলে তাক ধরে দুঃস্থদের জন্য কিছু লিখিনি। আমি শুধু নিজের কথা বলে যাই, ভাটি অঞ্চলের একজন বঞ্চিত নিঃস্ব দুখী মানুষ আমি, আমার কথা সব হাভাতে মানুষের কথা হয়ে যায়… দ্যাখেন তো এই অঞ্চল ঘুরে, মানুষের আয়ের কোনো উৎস আছে কিনা? (করিম শাহ ক্রমশ উত্তেজিত এবং তাঁর চোখ দুটো আর্দ্র হয়ে উঠছে) চারদিকে ভাসান পানি। জলে থৈথৈ করছে প্রতিটি বাড়ির উঠান। মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে? (করিম শাহের চোখে অশ্রুধারা) দিনে তিনবেলা নয়, শুধু একবেলা যদি দু’মুঠো খেতে না পারে, এই জন্ম কি মানুষের জন্ম?’
এই পৃথিবীটা একদিন বাউলের হবে’‘এই পৃথিবীটা একদিন বাউলের হবে’
প্রসঙ্গত, ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ধলআশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন লোকগানের এই কিংবদন্তি শিল্পী। তাঁর বাবার নাম ইব্রাহীম আলী ও মা নাইওরজান।
আব্দুল করিম জীবনভর তাঁর গানে অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির কথা বলে গেছেন। তাঁর গানে যেমন প্রেম-বিরহ ছিল, তেমনি ছিল খেটেখাওয়া মানুষের কথা। একই সঙ্গে আধ্যাত্মিক ভাবনাও রয়েছে এই শিল্পীর সৃষ্টিকর্মজুড়ে।