কারও হাত নেই, কারও পা। কেউ নিঃসন্তান, কারও–বা সন্তান থেকেও নেই। অনেকের নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। কেউবা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন নানা অসুখের যন্ত্রণা।
বেঁচে থাকার তাগিদে তাঁরা বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তাঁরা ভিক্ষা করেন। পাবনায় এমন প্রায় ৪০০ জনের জন্য প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে বিনা মূল্যে খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে জেলা শহরের শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজ প্রাঙ্গণে।
আয়োজকেরা তাঁদের ‘বৃহস্পতিবারের অতিথি’ বলেন। প্রায় আট বছর ধরে প্রতি বৃহস্পতিবার অতিথি আপ্যায়নের কাজটি করছেন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী। বৃহস্পতিবার দুপুর হলেই চলে আসেন অসহায় মানুষগুলো। কলেজ প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে এক মিলনমেলা।উদ্যোগটির নেপথ্যে আছেন জেলা সদরের মালঞ্চি ইউনিয়নের মাহমুদপুর বিলকোলা গ্রামের হোটেল ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান (৬৫) ও জেলা শহরের বাসিন্দা কানাডাপ্রবাসী শমসের আল হেলাল (৬৫)। এ ছাড়া তাঁদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন একদল তরুণ।
বৃহস্পতিবারেই কেন এই আয়োজন—এমন প্রশ্নের জবাবে আয়োজকেরা বলেন, প্রতিদিনই জেলা শহরে ভিক্ষুকের দেখা মেলে। তবে বহু বছর ধরে পাবনায় বৃহস্পতিবার দিনটি ভিক্ষুকদের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানের ব্যবসায়ীরা দানের জন্য টাকা সংরক্ষণ করেন।
বৃহস্পতিবার সেই টাকা দান করেন। ফলে এদিন শহরে গরিব-অসহায় মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাঁরা শহরে আসেন কিছু অর্থ সহায়তা পাওয়ার জন্য। দিনভর দোকানে দোকানে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে টাকা সংগ্রহ করে আবার ফিরে যান। এ কারণে দিনটিকে অনেকে ‘ভিক্ষা দিবস’ বলেন। একদিনে তাঁরা যা আয় করেন, তা দিয়ে বাকি ৬ দিন চলেন। ফলে অনেকে হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে রান্না খাবার কিনে খেতে পারেন না। এসব মানুষের কথা চিন্তা করেই প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে এই খাবারের আয়োজন শুরু হয়। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুরুটা ১১ বছর আগের। শহরের রূপকথা সড়কের শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজের সামনে আল-আমিন নামের একটি খাবার হোটেল চালাতেন আনিসুর রহমান। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তাঁর ছেলে মারা যান। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। ছেলের আত্মার শান্তি কামনায় প্রতি বৃহস্পতিবার দুই থেকে তিনজন ক্ষুধার্ত লোককে খাওয়াতেন তিনি।
এ বিষয়ে আনিসুর রহমান বলেন, খাওয়ানোর ধারা তিনি ধরে রাখতে পারবেন, এটা জানতেন না। কোনো কিছু না বুঝেই শুরু করেছিলেন। কিন্তু দিনে দিনে খবরটি ছড়িয়ে লোকসংখ্যা বাড়ছিল। তখন তিনি হোটেলের রান্নার পাশাপাশি ভিক্ষুকদের জন্য খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াচ্ছিলেন। একটা সময় এই উদ্যোগ একার পক্ষে চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হন কানাডাপ্রবাসী শমসের আল হেলাল। পরে হোটেল থেকে খাবার সরবরাহের স্থান নির্ধারণ হয় শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজ প্রাঙ্গণে। সেই থেকে গত আট বছর প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষকে এখানে বিনা মূল্যে খাবার দেওয়া হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পরিত্যক্ত একটি পুরোনো ভবনের পেছনে আইন কলেজের নতুন ক্যাম্পাস। সামনে ফাঁকা মাঠ। বেলা তখন একটা বাজে। মাঠে রান্নার কাজ প্রায় শেষ। চলছে প্যাকেট করার কাজ। এর মধ্যেই আসতে শুরু করেছেন অতিথিরা। কেউ বসছেন পুরোনো ভবনটির সিঁড়িতে, কেউবা ফাঁকা মাঠে। কেউবা পাত্রে রাখা বিশুদ্ধ পানি পান করছেন। বেলা পৌনে দুইটা বাজতেই বহু অতিথির সমাবেশ ঘটে সেখানে। বেলা দুইটার দিকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে মোনাজাত হয়। এরপর শুরু হয় খাবার সরবরাহ। আনন্দচিত্তে খাবার খেয়ে আবার বের হয়ে যান অতিথিরা।
সেখানে কথা হয় হালিমা বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর বাড়িঘর, ছেলেমেয়ে কেউ নেই। নানা অসুখে ভুগছেন। ঠিকমতো খেতে পারেন না। তাই বৃহস্পতিবার দুপুরে এখানে খেতে আসেন। জ্যোৎস্না বেগম (৭৫) নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমাগের কুনু আশ্রয় নাই। মেলা বছর ধরে কিলান্ত হয়া গেলি হেনেই আসি। হেনে আসে পানি খাই, খাওন খাই।’
সিদ্দিক প্রামাণিক (৭৬) নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘পেটের যে কী জ্বালা! দুই দিন না খালিও বিসুদবারে খাওয়া নিশ্চিত। তাই হেনে চলে আসি।’ আয়োজনের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবক আতাউর হোসেন বলেন, আয়োজনটির জন্য নির্দিষ্ট কোনো তহবিল বা কমিটি নেই। খাবার বা অর্থ সংগ্রহে কোনো প্রচার-প্রচারণাও চালানো হয় না। তবে কেউ নিজের ইচ্ছায় কিছু দিলে তা নেওয়া হয়। এভাবেই আয়োজনটি চলছে। যে যা পারছেন, সহযোগিতা করছেন। আনিসুর রহমান রান্না করে দেন, স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার সরবরাহ করেন। অর্থের জোগান অনুযায়ী খাবারের তালিকায় থাকে খিচুড়ি, ডিম খিচুড়ি, মাংস খিচুড়ি ও বিরিয়ানি। যেদিন যেমন অর্থ পাওয়া যায়, সেদিন তেমন খাবার দেওয়া হয়।
আরেক স্বেচ্ছাসেবী সিফাত রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ আট বছরে অসহায় মানুষগুলো আমাদের অতিথিতে পরিণত হয়েছেন। আমরা এখন তাঁদের বৃহস্পতিবারের অতিথি বলছি। অতিথিরা সানন্দে আসছেন। যা–ই জোগাড় হোক, তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছেন। এটা দেখেই আমাদের তৃপ্তি। উদ্যোগের বিষয়ে কানাডাপ্রবাসী শমসের আল হেলাল বলেন, ‘একদিন খাবার হোটেলে বসে বিষয়টি নজরে আসে। একটু খিচুড়ি খাওয়ার জন্য মানুষ ছুটে আসছেন।
তখন মনে হয়েছিল এইটুকু খাবারও হয়তো তাঁরা ঠিকমতো পান না। তাই উদ্যোগটা সচল রাখা হয়েছে। এখন প্রতি বৃহস্পতিবার মানুষ আসছেন। আমরা সাধ্যমতো তাঁদের মুখে একটু খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
বেঁচে থাকার তাগিদে তাঁরা বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তাঁরা ভিক্ষা করেন। পাবনায় এমন প্রায় ৪০০ জনের জন্য প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে বিনা মূল্যে খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে জেলা শহরের শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজ প্রাঙ্গণে।
আয়োজকেরা তাঁদের ‘বৃহস্পতিবারের অতিথি’ বলেন। প্রায় আট বছর ধরে প্রতি বৃহস্পতিবার অতিথি আপ্যায়নের কাজটি করছেন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী। বৃহস্পতিবার দুপুর হলেই চলে আসেন অসহায় মানুষগুলো। কলেজ প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে এক মিলনমেলা।উদ্যোগটির নেপথ্যে আছেন জেলা সদরের মালঞ্চি ইউনিয়নের মাহমুদপুর বিলকোলা গ্রামের হোটেল ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান (৬৫) ও জেলা শহরের বাসিন্দা কানাডাপ্রবাসী শমসের আল হেলাল (৬৫)। এ ছাড়া তাঁদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন একদল তরুণ।
বৃহস্পতিবারেই কেন এই আয়োজন—এমন প্রশ্নের জবাবে আয়োজকেরা বলেন, প্রতিদিনই জেলা শহরে ভিক্ষুকের দেখা মেলে। তবে বহু বছর ধরে পাবনায় বৃহস্পতিবার দিনটি ভিক্ষুকদের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানের ব্যবসায়ীরা দানের জন্য টাকা সংরক্ষণ করেন।
বৃহস্পতিবার সেই টাকা দান করেন। ফলে এদিন শহরে গরিব-অসহায় মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাঁরা শহরে আসেন কিছু অর্থ সহায়তা পাওয়ার জন্য। দিনভর দোকানে দোকানে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে টাকা সংগ্রহ করে আবার ফিরে যান। এ কারণে দিনটিকে অনেকে ‘ভিক্ষা দিবস’ বলেন। একদিনে তাঁরা যা আয় করেন, তা দিয়ে বাকি ৬ দিন চলেন। ফলে অনেকে হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে রান্না খাবার কিনে খেতে পারেন না। এসব মানুষের কথা চিন্তা করেই প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে এই খাবারের আয়োজন শুরু হয়। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুরুটা ১১ বছর আগের। শহরের রূপকথা সড়কের শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজের সামনে আল-আমিন নামের একটি খাবার হোটেল চালাতেন আনিসুর রহমান। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তাঁর ছেলে মারা যান। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। ছেলের আত্মার শান্তি কামনায় প্রতি বৃহস্পতিবার দুই থেকে তিনজন ক্ষুধার্ত লোককে খাওয়াতেন তিনি।
এ বিষয়ে আনিসুর রহমান বলেন, খাওয়ানোর ধারা তিনি ধরে রাখতে পারবেন, এটা জানতেন না। কোনো কিছু না বুঝেই শুরু করেছিলেন। কিন্তু দিনে দিনে খবরটি ছড়িয়ে লোকসংখ্যা বাড়ছিল। তখন তিনি হোটেলের রান্নার পাশাপাশি ভিক্ষুকদের জন্য খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াচ্ছিলেন। একটা সময় এই উদ্যোগ একার পক্ষে চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হন কানাডাপ্রবাসী শমসের আল হেলাল। পরে হোটেল থেকে খাবার সরবরাহের স্থান নির্ধারণ হয় শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজ প্রাঙ্গণে। সেই থেকে গত আট বছর প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষকে এখানে বিনা মূল্যে খাবার দেওয়া হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পরিত্যক্ত একটি পুরোনো ভবনের পেছনে আইন কলেজের নতুন ক্যাম্পাস। সামনে ফাঁকা মাঠ। বেলা তখন একটা বাজে। মাঠে রান্নার কাজ প্রায় শেষ। চলছে প্যাকেট করার কাজ। এর মধ্যেই আসতে শুরু করেছেন অতিথিরা। কেউ বসছেন পুরোনো ভবনটির সিঁড়িতে, কেউবা ফাঁকা মাঠে। কেউবা পাত্রে রাখা বিশুদ্ধ পানি পান করছেন। বেলা পৌনে দুইটা বাজতেই বহু অতিথির সমাবেশ ঘটে সেখানে। বেলা দুইটার দিকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে মোনাজাত হয়। এরপর শুরু হয় খাবার সরবরাহ। আনন্দচিত্তে খাবার খেয়ে আবার বের হয়ে যান অতিথিরা।
সেখানে কথা হয় হালিমা বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর বাড়িঘর, ছেলেমেয়ে কেউ নেই। নানা অসুখে ভুগছেন। ঠিকমতো খেতে পারেন না। তাই বৃহস্পতিবার দুপুরে এখানে খেতে আসেন। জ্যোৎস্না বেগম (৭৫) নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমাগের কুনু আশ্রয় নাই। মেলা বছর ধরে কিলান্ত হয়া গেলি হেনেই আসি। হেনে আসে পানি খাই, খাওন খাই।’
সিদ্দিক প্রামাণিক (৭৬) নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘পেটের যে কী জ্বালা! দুই দিন না খালিও বিসুদবারে খাওয়া নিশ্চিত। তাই হেনে চলে আসি।’ আয়োজনের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবক আতাউর হোসেন বলেন, আয়োজনটির জন্য নির্দিষ্ট কোনো তহবিল বা কমিটি নেই। খাবার বা অর্থ সংগ্রহে কোনো প্রচার-প্রচারণাও চালানো হয় না। তবে কেউ নিজের ইচ্ছায় কিছু দিলে তা নেওয়া হয়। এভাবেই আয়োজনটি চলছে। যে যা পারছেন, সহযোগিতা করছেন। আনিসুর রহমান রান্না করে দেন, স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার সরবরাহ করেন। অর্থের জোগান অনুযায়ী খাবারের তালিকায় থাকে খিচুড়ি, ডিম খিচুড়ি, মাংস খিচুড়ি ও বিরিয়ানি। যেদিন যেমন অর্থ পাওয়া যায়, সেদিন তেমন খাবার দেওয়া হয়।
আরেক স্বেচ্ছাসেবী সিফাত রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ আট বছরে অসহায় মানুষগুলো আমাদের অতিথিতে পরিণত হয়েছেন। আমরা এখন তাঁদের বৃহস্পতিবারের অতিথি বলছি। অতিথিরা সানন্দে আসছেন। যা–ই জোগাড় হোক, তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছেন। এটা দেখেই আমাদের তৃপ্তি। উদ্যোগের বিষয়ে কানাডাপ্রবাসী শমসের আল হেলাল বলেন, ‘একদিন খাবার হোটেলে বসে বিষয়টি নজরে আসে। একটু খিচুড়ি খাওয়ার জন্য মানুষ ছুটে আসছেন।
তখন মনে হয়েছিল এইটুকু খাবারও হয়তো তাঁরা ঠিকমতো পান না। তাই উদ্যোগটা সচল রাখা হয়েছে। এখন প্রতি বৃহস্পতিবার মানুষ আসছেন। আমরা সাধ্যমতো তাঁদের মুখে একটু খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি।